Friday, 28 June 2013

গল্প করতে করতে Halua Cracker Bites!!

২৮ জুন ২০১৩



আমাদের দেশের মিষ্টি খাবারের মধ্যে হালুয়া অন্যতম। অনেক সামাজিক অনুষ্ঠানেই হালুয়া তৈরি করাটা আমাদের সামাজিকতার একটা অংশই হয়ে গেছে। যেখানেই একটু মিষ্টি মুখ করা, সেখানেই হালুয়াটা না হলে যেন চলে না। হালুয়া এমনি এমনি যেমন খাওয়া যায়, তেমনি রুটি/লুচি/পরোটা সহ খেতে তো সেই রকম। কিন্তু সমস্যা হলো, হালুয়া যেমন ফ্রিজে রেখে বেশ কিছুদিন ধরে খাওয়া যায়, রুটি/লুচি/পরোটা কিন্তু ঠিক সেরকম নয়। ফ্রিজ থেকে হালুয়া বের করে দেখা গেল রুটি বা পরোটা কোনটাই বানানো নেই। সময় থাকলে রুটি বানানো যেতেই পারে, কিন্তু আমাদের যান্ত্রিক জীবনে সবসময় এই কষ্টটা যেন হয়ে উঠতে চায় না। ঠিক যখন হালুয়াটা একা একা আমাদের পেটে ঢোকার অবস্থা, সেই সময় এই ঘটনাটা ঘটলো। সেই গল্পই বলছি।



খাবার টেবিলে বসেই আইডিয়াটা এলো। আপনাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো এটার স্বাদ নিয়েও ফেলেছেন, তারপরেও বলি। যারা এখনো এটা ট্রাই করেননি, তাদের জন্যেই বলছি। ক্র্যাকার্সের প্যাকেটটা মড়মড়িয়ে খুলতে খুলতেই মনে হলো পেটের ভেতরে হালুয়া এবং ক্র্যাকার্স আলাদা আলাদা যাবে কেন? সুতরাং বুঝতেই পারছেন যে খাবার টেবিলে গল্প করতে করতেই বাকিটা হয়ে গেল। একেকটা ক্র্যাকার্সের উপরে বসে গেল দু'টা মজার হালুয়ার স্তর। তার উপরে উড়ে এসে জুরে বসলো কিছু গ্রেটিং করা গাজর।



প্রথম বাইটটাই বলে দিলো আইডিয়াটা ভালো ছিল! হালুয়ার মিষ্টি-ভাবটা মুখে আসার সাথে সাথেই ক্র্যাকার্সের মচমচ! চকোলেটের বাক্সের মতো কিছুটা সাসপেঞ্জ রাখার চেষ্টা করলাম। হালুয়াগুলি মিক্স-এন্ড-ম্যাচ করে দিলাম। একেকটা আলাদা ক্র্যাকার্সের উপরে একেক হালুয়ার কম্বিনেশন। মুখে দেবার পর আবিষ্কার করলাম ওখানে কি কি ছিল। খাবার তৈরি করতে করতে গল্প সবসময় হয় না। তবে সেদিন হয়েছিল; হয়েছিল এই হালুয়া-ক্র্যাকার্সের (Halua Cracker Bites) বদৌলতেই। আর এটা কিন্তু সত্যি সত্যিই গল্প করে খাওয়ার জিনিস। সবগুলি একসাথে বানাতে কিন্তু কিছু সময় নেবে। বানাতে বানাতে প্রথমে বানানোটা কিন্তু বেশ নরম হয়ে যাবে। তখন কিন্তু ক্র্যাকার্সের মচমচে-ভাবটা থাকবে না। তাই এক হাতে বানান, আর আরেক হাতে মুখে পুড়তে থাকুন! এটা প্রায় আসক্তির মতো! ক্র্যাকার্স বা হালুয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত এটা থামানো মুসকিল!



ডেসার্ট বা এপেটাইজার বা বিকেল বা সন্ধ্যার খাবার হিসেবে এটা বেশ মজার বলেই আমাদের কাছে মনে হয়েছে। আশা করি এখনো এটা ট্রাই না করে থাকলে শিগগিরই করবেন। আপনাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে ভুলে যাবেন না যেন। পরের পোস্টের আগ পর্যন্ত বিদায় নিচ্ছি।

Wednesday, 26 June 2013

কাঁচা কাঁঠালে ভালোবাসার মিশ্রণ......

২৬ জুন ২০১৩

Food Photography, Dhaka, Bangladesh


ভালোবাসার মানুষদের জন্য আমরা কত কিছুই না করি। ভালোমন্দ কিছু রান্না করে খাবার পরিবেশন তার মধ্যে আন্যতম। এটা হয়তো সবাই স্বীকার করবেন যে, আমাদের মা'দের মধ্যে এটা যতোটা আছে সেটা হয়তো অন্য যে কারোর চাইতে বেশী। এটা আমাদের সংস্কৃতিরই একটা অংশ, যা আমাদের সামাজিকতাকে দেয় পরিপূর্ণতা। এইরকম আতিথেয়তা মনে হয় পৃথিবীর অন্য কোথাও দেখা যাবে না। আমরা যতটুকু আতিথেয়তা শিখেছি, সেটা অবশ্যই তাঁদের গুণেই।

এই ভালোমন্দ খাবারের কথা যখন আসছে, তখন এমন কিছু খাবারের কথা চলে আসে, যেগুলির প্রসেস খুব একটা ছোট নয়; সময় আর পরিশ্রম লাগে বেশি। কিন্তু ভালোবাসা বলে কথা! সেই ভালোবাসা হার মানায় সকল পরিশ্রম আর ক্লান্তিকে। আমরা যখন এই আদরের খাবার খাই, তখন আসলে আমরা সেই ভালোবাসার স্বাদই নিই। আর ঠিক এই কারণেই সেটা হয় আলাদা ধরণের মজাদার। সেই খাবারে থাকে আবেগ। স্বাদের ব্যাপারে সেখানে কোন ধরণের কার্পণ্য করা হয়নি। সময় বাঁচানোর জন্য খোঁজা হয়নি কোন সর্টকাট। ট্র্যাডিশনাল রান্নার প্রসেসের মতোই সেটা হয়েছে কিছুটা দীর্ঘ। প্রেত্যেকটা উপকরণ খুব সাবধানে আলাদাভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে হয়তো একসাথেই তৈরি করা যেত। কিন্তু তাতে পার্ফেকশন হয়তো আসতো না। পৃথিবীর অন্যান্য কিছু ট্র্যাডিশনাল খাবারও এইরকম লম্বা প্রসেসে তৈরি হয়। যে কারণে সেই খাবারগুলির নামডাকও সেইরকম। ফ্রেঞ্চ ভেজিটেবল ডিস রাটাটুই (Ratatouille), অথবা মেক্সিকান ট্র্যাডিশনাল সস মোলি (Mole) আজ হয়তো বিভিন্নভাবে তৈরি হচ্ছে, কারণ মানুষের আজ সময় কম। কিন্তু সেই ঐতিহ্যের মূল্য সবসময়ই আছে, সেখানে প্রত্যেকটি উপকরণকে আলাদাভাবে তৈরি করা হয়।

Food Photography, Dhaka, Bangladesh


যাই হোক, অনেক কথা বলে ফেললাম। আসলে না বলে পারলামও না। এই কাঁচা কাঁঠালের জন্যে কম ঘোরাঘুরি হয়নি। সিজন তো শেষই হয়ে গিয়েছিল; এখন সব কাঁঠালই পাকা। আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম, তারপরেও কিভাবে যেন পাওয়া গেল একটি কাঁচা কাঁঠাল। হয়তো সেই ভালোবাসার জোরেই। আমরা সময় করতে পারছিলামনা বলে মা (নিলুফা কামাল) কাঁচা কাঁঠাল ভাপ দিয়ে ফ্রিজে তুলে রেখে দিয়েছিলেন। ভাপ না দিলে সেটা কাঁচা থাকার প্রশ্নই ছিল না। আমরা দু'দিন পরে সময় করতে পেরেছিলাম; আর তাই লাইট-ক্যামেরা-স্ট্যান্ড সবকিছু নিয়ে মা'র রান্নাঘরে হাজির!





কাঁঠালটি ছোট টুকরা করা হয়েছিল ভাপ দেওয়ার যাতে সুবিধা হয় সেজন্যে। আর আগে থেকেই ভিজিয়ে রাখা বুটের ডালের সাথে ভাপ দিয়ে রাখা কাঁচা কাঁঠালের টুকরা, রসুন, টুকরা করা আদা, সামান্য লবণ, সামান্য হলুদ গুঁড়া ও পানি দিয়ে ভালোমতো সিধ্ব করে নিলেন মা। ২৫-৩০ মিনিটের মধ্যেই সিধ্বের কাজ সম্পন্ন হয়ে যায়। সিধ্ব হয়ে গেলে ঠান্ডা হওয়ার জন্যে মা কিছুক্ষণের জন্য রেখে দিলেন।







এর মধ্যেই সেরে ফেললেন মসলাগুলির প্রস্তুতি। একটু ঝাল না হলেই যেন হয় না; তাই চার-পাঁচটি শুকনা মরিচ তেলে ভেজে উঠালেন। একই তেলে ১০-১২টার মতো আস্ত এলাচ ভেজে উঠালেন। এখন আবার ওই একই তেলে দেড় টেবিল চামচ পরিমাণ আস্ত জিরা ও এক চা চামচ পরিমাণ কাবাব চিনি ভেজে তারপর তেল ঝরিয়ে নিলেন।





এখন সমস্ত মসলাগুলি পাটায় খুব ভালোমতো বেঁটে নিলেন। আবার এই মসলার সাথে সিধ্ব কাঁচা কাঁঠাল ও বুটের মিশণটিও বেঁটে নিলেন। আপনারা পাটা ব্যবহার না করে ফুড প্রসেসর ব্যবহার করতে পারেন। তবে দু'টার টেক্সচার একটু আলাদা হবে। মা পাটার টেক্সচারটাকেই বেশি পছন্দ করেছেন।







মিশ্রণটি বাঁটা হয়ে গেলে তাতে ধনে পাতা কুঁচি, লবণ (স্বাদমতো), সামান্য চিনি ও ডিম দিয়ে খুব ভালোমতো মেখে নিলেন।




মিশ্রণটি ভালোমতো মাখানো হয়ে গেলে টিকিয়ার আকারে গোল গোল চ্যাপ্টা চ্যাপ্টা করে গরম তেলে ছেড়ে দিলেন মা। দুই পিঠ ভালোমতো ভাজা হয়ে গোল্ডেন ব্রাউন হয়ে গেলে তৈরি হয়ে গেল কাঁচা কাঁঠালের টিকিয়া।

Food Photography, Dhaka, Bangladesh




আমরা এই টিকিয়া খেয়েছিলাম বিরানী আর সালাদের সাথে। এখনো মুখে লেগে আছে। এখন কাঁচা কাঁঠাল এতোটাই দুষ্প্রাপ্য হয়ে গেছে যে, হয়তো আগামী গ্রীষ্মের জন্যে অপেক্ষা করতে হতে পারে। তবে মা'র ফ্রিজে আমাদের জানা মতে ভাপ দেওয়া কিছু কাঁচা কাঁঠাল এখনো রয়েছে! হুমম... দেখা যাক!!

আজ এ পর্যন্তই। আমাদের এই লম্বা পোস্টে আপনাদের জন্যে ভালোবাসা রইলো। আশা করি মতামত দেবেন।

Monday, 24 June 2013

একটু টক না হলে কি চলে??

২০ মে ২০১৩

আমরা কিছুদিন ধরে শুধু মাদার'স রেসিপি নিয়ে লিখে যাচ্ছি। অবশ্য কেনই বা লিখবো না বলুন? বহুদিনের অভিজ্ঞতা-সমৃদ্ধ একজন পাকা রাধুনীর রেসিপিগুলি শুধু রেসিপিই যে নয়। সেগুলি প্রত্যেকটি একেকটি ইতিহাস। প্রত্যেকটির পিছনেই রয়েছে একটা গল্প; রয়েছে অভিজ্ঞতার ঝুরি; পারার আনন্দ; ব্যর্থতার কষ্ট; সাধনা। প্রায় ২৫ বছর আগে মা'র (শরীফুন নাহার) কাছে ছিল না ইন্টারনেট; ছিলনা রান্না শেখার খুব বেশি সুযোগ। শুনে শুনে, দেখে দেখে, আর করে করেই সেই শেখা। আচার তৈরি করার কিছু কৌশল জেনেছিলেন এদিক-ওদিক থেকে। নানুর কাছ থেকে শিখেছিলেন কিছু। তিনিও ছিলেন পাকা রাধুনী। তিনি আমাদের ছেড়েছেন অনেকদিন হলো, কিন্তু তাঁর আচারের স্বাদ আমাদের ছেড়ে যায়নি। নানাবাড়ির এক দঙ্গল আম গাছ কিন্তু বলেই দিত সেই আচারের প্রধান উপকরন কোথা থেকে আসতো। যাই হোক, আজ সেই আমের আচার নিয়েই কথা বলবো। আমের টক আচার।


 মুখরোচক খাবার কার না ভালো লাগে? আর মুখে রুচি বাড়ানোর জন্য আমরা কত কিছুই না করি। খাবার টেবিলে আচারের একখানা বয়াম থাকলে কি মজাটাই না লাগে। বৃষ্টির দিনে খিচুরি, আর চার সাথে আমের টক আচার... ইসসস... শুনলেই জিভে পানি আসে... আসুন, দেরি না করে আচারের ভেতরে চলে যাই।




 

 

আমগুলিকে প্রথমে বেছে বেছে নিলাম যাতে পোকা না থাকে। তারপরেও বাড়তি সতর্কতার জন্য আমের মুখটা কেটে নিয়ে পানিতে ১০-১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখি। তারপর আমগুলি তুলে নিয়ে শুকনা কাপড় দিয়ে ভালোমত মুছে নিই। খেয়াল রাখতে হবে যেন আচারে কোনরকম বাড়তি পানি যেন না থাকে। এরপর আমগুলিকে খোসাসহ চার টুকরা করে নিই। এখন কিছু হলুদ আর লবণ দিয়ে আরও ১৫-২০ মিনিট রেখে দিই। এর পরে শুরু হবে চূলা পর্ব।




 

সরিষার তেল হাঁড়িতে দিয়ে তাতে কিছু পাঁচ ফোড়ন, ভিনেগার-মাখানো আদা-রসুন বাটা লবণ, মরিচ গুঁড়া দিয়ে মসলাটাকে খুব ভালোমত কষিয়ে নিই। মসলা কষে গেলে সামান্য একটু জর্দার রঙ ভিনেগারএ গুলিয়ে তাতে দিই যাতে আচারের একটি সুন্দর রঙ আসে। 








এখন এই কষানো মসলায় আম দিয়ে খুব ভালোমত নাড়াচাড়া করে ১৫-২০ মিনিট রান্না করি। আচারের গন্ধ বের হলেই বুঝতে পারবেন যে আচার তৈরি। এখন পরিষ্কার ও সম্পূর্ণ শুকনো বয়ামে আচারগুলি ভরি। বয়াম আচার দিয়ে ভরে গেলে এমনভাবে সরিষার তেল ঢেলে দিতে হবে যেন আচারগুলি তেলে পুরোপুরি ডুবে থাকে। হয়ে গেল আমের টক আচার।

আপনাদের মতামত দিতে ভুলে যাবেন না যেন। আপনাদের মতামতই আমাদের সামনে এগুনোর শক্তি যোগায়। শক্তি থাকলে শিগগিরই আবার লিখবো। আজ এ পর্যন্তই।

আমের আচার নিয়ে আমাদের অন্য পোস্টগুলি দেখুনঃ
আমের কাশ্মিরী আচার
আমের ঝুরি আচার

Sunday, 23 June 2013

অতি সাধারন একটা ব্রেকফাস্ট...০৩ (আলুর দম নিয়ে কিছু কথা)

২৩ জুন ২০১৩



এর আগে ব্রেকফাস্টের টেবিলে আমরা অতি সাধারণ চিচিঙ্গা ভাজি আর ডিম পোঁচ নিয়ে গল্প করেছিলাম। তারও আগে লিখেছিলাম অতি সাধারণ বাঁধাকপি ভাজি নিয়ে। আমাদের সবারই সকালের নাস্তা নিয়ে কিছু না কিছু গল্প রয়েছে। আমরা সেই গল্পগুলিই এখানে শেয়ার করছি। আমাদের ক্ষেত্রে সকালের নাস্তার সাথে মায়ের হাতের একটা স্পর্শ আমরা সবসময়ই খুঁজে পেয়েছি। ব্রেকফাস্টটাকে একটু মজাদার করার জন্য মা কত কিছুই না করেছেন। আর কতবারই না সেই রকম সকাল গেছে যখন কোন রকমে নাস্তা গলায় পুড়ে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেছি। মা চিতকার করে বলেছেন, "খাওয়াটা তো শেষ করে যা!" তখন বুঝিনি সেই সময়গুলি একসময় সোনালী সৃতি হয়ে যাবে। আসলে সময় এমন একটা জিনিস, যা যেকোন তুচ্ছ ঘটনাকেও স্বর্ণাক্ষরে লিখে ফেলতে পারে।



স্বাদের তৃপ্তি আনার জন্যে মা সবসময় চিন্তা করেছেন - কাল সকালের নাস্তা কি হবে। সকালের নাস্তাটা ছিল একটা ম্যাজিক বাক্সের মতো - ভেতর থেকে কি বেরুবে সকাল হবার আগে জানা যেত না! আলুর প্রতি একটা আকর্ষণ ছোটবেলা থেকেই ছিল, তাই ব্রেকফাস্টে আলুর আইটেম দেখলে মনটা নেচে উঠতো। আর আলুর আইটেম বলতে গেলে আলুর দমের কথা না বললে কি গল্প পরিপূর্ণ হবে? কি সাধারণ একটা খাবার, তারপরেও তৃপ্তি নিয়ে খাওয়া হয়নি এমন সকাল মনে হয় কোন দিনই আসেনি। মা'র হাতের যাদু মনে হয় এটাকেই বলে - সাধারণতঃ আসাধারণ। অসাধারণ না হওয়াটাই ছিল একটা নিউজ!



আলুর দমের রেসিপি একেক জনের কাছে একেক রকম থাকতে পারে। এক মা'কে (শরিফুন নাহার) দেখেছি তিনি আলু ভেঙ্গে ছোট ছোট করে আলুর দম বানাতেন; আর আরেক মা'কে (নিলুফা কামাল) দেখেছি বেশ বড় বড় টুকরা করে পরিবেশন করতে। বাবা বড় টুকরা পছন্দ করেন বলেই মা টুকরাগুলিকে ওরকম রাখতেন। আসলে প্রত্যেকটি ফ্যামিলির রেসিপিগুলিই একেকটি গল্প। খাবার-দাবার যেমন আমাদের পরিবারকে নিয়ে কথা বলে, তেমনি কথা বলে সেই পরিবার যেখান থেকে এসেছে সেই এলাকার। একই খাবার দেশের একেক জায়গায় যেমন একেক রকমভাবে রান্না করা হয়, তেমনি একেক রকমভাবে পরিবেশন ও খাওয়া হয়।

সকালের নাস্তা নিয়ে আপনাদের সকলেরই গল্প রয়েছে নিশ্চয়। আশা করি শেয়ার করবেন আমাদের সাথে। আবারও আরও এক ব্রেকফাস্ট নিয়ে লিখবো আশা রাখি। আজ এখানেই বিদায়।

Wednesday, 19 June 2013

চিকেন নিয়ে চলতেই থাকবে!... বাঁটা পিঁয়াজে চিকেন ভুনা...

১৯ জুন ২০১৩



আবারও চিকেন? জ্বি হ্যাঁ, আবারও! জানি, চিকেন নিয়ে আমাদের পোস্টের পর পোস্ট দেখে কেউ কেউ বলবেন এরা বোধহয় চিকেন ছাড়া খাওয়া-দাওয়াই করেন না! যদিও কথাটা পুরোপুরি সত্য নয়, তবে চিকেন আমাদের মেনুতে মোটামুটি রেগুলার একটা আইটেম। তাই এটা নিয়ে আমাদের চেষ্টাও বেশ রেগুলার। এই রেগুলার চেষ্টার ফলশ্রুতিতে আগের অনেকবারের মতো আমরা আবারও ফিরে তাকিয়েছি আমাদের মাদার'স রেসিপির দিকে, যেখানে আমরা একবার একটু উঁকি দিলেই কিছু না কিছু পেয়ে যাই। এক্কেবারে যাদুর বাক্সের মতো! আমাদের মা'দের রেসিপিগুলি অনেক ক্ষেত্রেই খুব সাধারণ, কিন্তু খুব সুস্বাদু। স্বাদে ভিন্নতা আনার প্রধান উপায়গুলির একটা হলো মসলাগুলিকে নিয়ে খেলা করা। আর এভাবেই এই আলাদা চিকেন রেসিপির প্রধান মসলা হয়ে গেল পিঁয়াজ; বা আরও সূক্ষ্মভাবে বলতে গেলে পিঁয়াজ বাঁটা বা আনিওন পেস্ট। অনেকেই চিকেন রান্নায় পিঁয়াজ বাঁটা দেন। মা'র (নিলুফা কামাল) এই রেসিপিতে সমস্ত বাঁটা ও গুঁড়া মসলা দিয়ে চিকেনকে তার নিজের পানিতেই ভুনে নেওয়া হয়েছে।






চিকেনের রেগুলার সাইজ নেওয়া হয়েছে এখানে - প্রায় দেড় কেজি পরিমাণের মুরগী। মুরগীর টুকরাগুলি পরিষ্কার করে তাতে পিঁয়াজ বাঁটা (একটু বেশী পরিমাণ), আদা-রসুন বাঁটা, মরিচ গুঁড়া, ধনে গুঁড়া, জিরা গুঁড়া, লবণ ও লেবু দিয়ে ঘন্টা-দু'য়েক মেরিনেট করে রাখা হয়েছে।





দুই ঘন্টা পর কড়াইতে মেরিনেট করা মাংস দিয়ে মিডিয়াম আঁচে খুব ভালোমতো ভুনে নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে সামান্য পানি দেওয়া যেতে পারে, যদিও মেরিনেট করা মাংস থেকেই বের হওয়া পানি মাংসটাকে ভুনতে যথেষ্ট হতে পারে। মাংস ভুনা হয়ে গেলে তা একটি বাটিতে তুলে রাখা হয়েছে। এখন ব্যবহার করবো খাবার তেল (আমরা রাইস ব্র্যান অয়েল ব্যবহার করেছি। আপনি যে কোন খাবার তেল ব্যবহার করতে পারেন)। কড়াইতে তেল গরম হবার পর তাতে বেশ ভালো পরিমাণ পিঁয়াজ কুঁচি দেওয়া হয়েছে। পিঁয়াজ কুঁচি একটু বাদামী বর্ণ ধারণ (প্রায় বেরেস্তার কাছাকাছি রঙ) করলে তাতে গরম মসলার গুঁড়া দেয়া হয়েছে।





এর পর এই পিঁয়াজ ভুনার মধ্যে আগে থেকে ভুনা মুরগীটা দিয়ে খুব ভালোমতো মেশানো হয়েছে। এক্ষেত্রেও চাইলে সামান্য পানি দেওয়া যেতে পারে। মুরগীটা একদম মাখামাখা হয়ে গেলে তাতে সামান্য চিনি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আস্ত বা দুই টুকরা করা কাঁচা মরিচ দেওয়া হয়েছে। গার্নিসিং-এর উপরে পুদিনা পাতা কুঁচি দেওয়া হয়েছে। রান্নাটার সুঘ্রাণই বলছিল যে বাঁটা পিঁয়াজে চিকেন ভুনা এখন খাবার জন্যে রেডি। নান বা পরোটা দিয়ে এটা খেতে সেইরকম লাগবে। তবে আমাদের সামনে সেই সুযোগ ওই মুহূর্তে না থাকায় আমরা গরম ভাতের সাথেই এর স্বাদ নিয়েছি।

খুব শিগগিরই নতুন কোন কিছু নিয়ে লিখার আশা নিয়ে আজকে এখানেই শেষ করছি। আপনাদের কমেন্ট আমাদের জন্য একটা বিরাট অনুপ্রেরণা; তাই সেটা দিতে ভুলে যাবেন না যেন!

আমাদের চিকেন নিয়ে লেখা অন্য পোস্টগুলিঃ
সরিষা-পুদিনা চিকেন ফয়েল বারবিকিউ
চিলি চিকেনের সাথে গাজর
পাস্তার সাথে চিকেন ব্রোস্ট আর ভেজিটেবল
স্টাফড চিকেন ব্রেস্ট, সাথে পনির ও পুদিনা
চিকেন সালাদ উইথ সামার ভেজি
চিলি-লাইম চিকেন
চিকেন স্ট্রিপ কাবাব
পেস্তো পাস্তার সাথে চিকেন বল

Monday, 17 June 2013

লইট্ট্যা-টমেটোর মাখামাখি!!

১৭ জুন ২০১৩



যদি বলি বম্বে ডাক (Bombay Duck), তাহলে কি বুঝবেন? জ্বি না; আমরা কোন হাঁসের প্রজাতির কথা বলছি না। আশ্চর্য হলেও সত্যি যে এটা একটা মাছের নাম! তবে আমরা আবার এই মাছকে লইট্ট্যা মাছ বলেই চিনি। সামুদ্রিক এই মাছ শুঁটকির জন্যেই নাম কুড়িয়েছে বেশি। সেই বৃটিশ আমলে যখন ওই অদ্ভুত ইংরেজী নামকরণ করা হয়েছিল, তখন থেকেই এর শুঁটকি বিখ্যাত। এই মাছের তরকারি রান্না খুব একটা সহজ নয়, কারণ এই মাছ খুব কম সময়েই পরিপূর্ণ রান্না হয়ে যায়; চূলার সামনে থেকে একটু সরলেই সমস্যা হয়ে যায়। আর মাছটা বেশ নরম প্রকৃতির; তাই উল্টাতে গেলেও ভেংগে গুঁড়া গুঁড়া হয়ে যাবে খুব সহজেই। আবার এই মাছ কখোনোই লবণ দিয়ে ধু'তে হয়না; কারণ লবণ দিলেই মাছটা শক্ত হয়ে যায়! এই ব্যাপারগুলি জানা ছিল মা'র (শরীফুন নাহার) বদৌলতে। ঠিক ধরেছেন; এবারও মাদার'স রেসিপি দিতে যাচ্ছি আমরা।









মাছগুলি খুব বড় আকৃতির ছিল না; মিডিয়াম আকারের থাকায় দুই টুকরা করেছি। প্রায় ১২ টুকরার মত মাছ শুধু পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে রাখলাম। যেহেতু তরকারিটি মাখামাখা হবে, তাই পিঁয়াজের মিহি কীমা ব্যবহার করেছি। তেলে পিঁয়াজ কীমা হাল্কা বাদামী বর্ণ হবার পরে তাতে মিডিয়াম আকারের দু'টি টমেটো কুঁচি করে দিয়েছি। পিঁয়াজ ও টমেটোর ভুনা তাড়াতাড়ি হবার জন্য সামান্য লবণ দিয়েছি। লবণের ব্যাপারে একটু সতর্ক হতে হয়েছে, কারণ এটি একটি সামুদ্রিক মাছ; এর মধ্যে প্রাকৃতিকভাবেই লবণ থাকে। পিঁয়াজ ও টমেটোর কীমা মাখামাখা হয়ে যাবার পর তাতে সামান্য হলুদ গুঁড়া ও শুকনা মরিচ গুঁড়া দিয়ে ভালোভাবে ভুনা করে নিয়েছি। মসলাটা যেন শুকিয়ে না যায় তার জন্য সামান্য পানি দিয়েছি।







এখন মসলার মধ্যে মাছগুলিকে সাবধানে বিছিয়ে দিই। মোটামুটি কড়া আঁচেই রান্নাটি সেরেছি কারণ লইট্ট্যা বেশ পানি ছাড়ে। মাছগুলি মাত্র একবার উল্টিয়েছি, কারণ শুরুতেই বলেছি লইট্ট্যা মাছ খুবই নরম; বেশী নাড়লে ভেঙ্গে যায়।সম্পূর্ণ রান্নাটি হতে মাত্র ৫-৭ মিনিট লেগেছে।

টমেটো যদি লইট্ট্যা মাছের খালাতো ভাই হয়, তবে ধনে পাতা হবে চাচাতো ভাই! এই দু'জন ছাড়া লইট্ট্যা মাছকে অন্ততঃ আমরা ভাবতে পারি না! গরম ভাতের সাথে সার্ভ করলেই মজাটা টের পাওয়া যায়।

আপনাদের ফীডব্যাক দিতে ভুলে যাবেন না যেন। আপনারাই আমাদের অনুপ্রেরণা!