প্রত্যেক মানুষের জীবনে এমন কিছু মানুষ থাকে যাদের শুধু ধন্যবাদ দিলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। কারণ এই মানুষগুলি না থাকলে আমাদের জীবন অর্থহীন হয়ে যেত। তেমনই দু'জন মানুষের মধ্যে একজন হলেন আমার মা, আর আরেকজন বাবা। যাদের কারণে এই পৃথিবীতে আসা, তাঁদের প্রতি উৎসর্গ করার কত কিছুই না আছে। কিন্তু নিজ হাতে বানানো একটা উপহারের চাইতে খুব বেশি ভালো কিছু খুঁজে পাওয়া মুসকিল। আজ বাবা দিবসে তাই অন্য কোন কিছু চিন্তা না করে একটা কেকের পেছনেই সময়টা দিলাম। দিনের বেলায় বাবাকে পাবো না, তাই সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়টুকু পেলাম কেক বানাবার।
যদিও আমি কেক বানানোতে খুব একটা এক্সপার্ট নই, তাই ফেসবুকে খুঁজে পাওয়া একজন এক্সপার্টের রেসিপি ধার করলাম। রেসিপির স্পেশাল দিকটি ছিল প্রেসার-কুকারে কেক তৈরি। আমি বেকিং-এ খুব একটা সাচ্ছন্দ্য বোধ করি না। কারণ সেটা মাপজোকের উপরে খুব নির্ভরশীল। আপনারা যারা এই ব্লগ ফলো করছেন, তারা হয়তো খেয়াল করেছেন যে আমরা রেসিপি দেয়ার ক্ষেত্রে মাপা-মাপি খুব কম করি। ঠিক একই কারণে বেকিং-এর দিকে কম যাওয়া। তার উপরে আবার ইলেক্ট্রিসিটির সমস্যা তো রয়েছেই। বেকিং-এর মাঝে ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেলে কি অবস্থা হতে পারে একবার চিন্তা করে দেখুন তো! তাই ফেসবুকের রসনা বিলাস পেইজে এই প্রেসার-কুকার কেকের রেসিপি দেখে আর অন্য দিকে মুখ ঘুরাইনি। একবার তৈরি করে একটা আইডিয়া নিয়েছি; আর তারপরে আজই দ্বিতীয় চেষ্টা।
রেসিপি অনুযায়ী তিনটা ডিমকে আগে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিয়েছি। এরপর এর সাথে আধা কাপ চিনি, ও ১/৪ কাপ খাবার তেল (আমরা রাইস-ব্র্যান অয়েল ব্যবহার করেছি; আপনি যে কোন তেল ব্যবহার করতে পারেন) দিয়ে চিনি পুরোপুরি গলে যাওয়া পর্যন্ত দুই থেকে তিন মিনিট ব্লেন্ড করেছি।
এর পরে দুই চা-চামচ পরিমাণ গুঁড়া দুধ, এক চা-চামচ বেকিং পাউডার ও ১/২ চা-চামচ ভ্যানিলা এসেন্স দিয়ে আবার ব্লেন্ড করেছি। ভ্যানিলা এসেন্স না দিয়ে নিজের পছন্দ অনুযায়ী যে কোন এসেন্স ব্যবহার করা যেতে পারে। এসেন্স আসলে আমরা ব্যবহার করছি যাতে কেকে ডিমের গন্ধ না থাকে।
মিশ্রণটিকে শুকনো একটি বাটিতে ঢেলে নিলাম ও এই মিশ্রণে ৩/৪ কাপ ময়দা দিয়ে খুব ভালোভাবে মিশিয়ে একটি মসৃণ ব্যাটার তৈরি করলাম। যে পাত্রে কেক করবো সেই পাত্রে সামান্য খাবার তেল দিয়ে পাত্রটিকে ভালোমত মাখিয়ে নিয়েছি। তার উপরে ছিটিয়ে দিয়েছি সামান্য কিছু ময়দা। এখন এই পাত্রে পুরো ব্যাটারটি ঢেলে দিলাম।
প্রসেসটি যেহেতু পুরোটিই প্রেসার কুকারে হবে, তাই প্রেসার কুকারকেও রেডি করে নিলাম। ঢাকনা ছাড়া প্রেসার কুকারটিকে চূলায় তিন থেকে চার মিনিট গরম করে নিলাম। এখন যে পাত্রে কেক বানাবো সেই ব্যাটারসহ পাত্রটি খুব সাবধানে কুকারের মাঝখানে বসিয়ে দিলাম। এখন কুকারের ঢাকনাটা দেবো, তবে কুকারের মাথায় লাগানো হুইসেল বা সিটি-টি খুলে নিব। ভিতরে কোন পানি দেওয়ার প্রয়োজন নেই। খুব ধিমা আঁচে ২৫-৩০ মিনিটের মধ্যেই কেক হয়ে যাবে। ২৫ মিনিট পরে রান্না ঘরে একটি সুঘ্রাণ ছড়াবে, যা বলে দেবে কেকটি রেডি। সাবধানে ঢাকনা খুলে একটি পরিষ্কার ছুরি কেকের মধ্যে ঢুকিয়ে উঠানোর পর যদি ছুরির গায়ে যদি কোন কিছু লেগে না থাকে, তার মানে আমার কেক তৈরি।
যেহেতু বাবা দিবসের জন্য কেকটি তৈরি, তাই উপরে চকলেট গলিয়ে দিয়েছি এবং তার উপরে কিছু জেমস চকলেট দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছি। বাবা খেলেন। বললেন - "ভালো হয়েছে; তবে চিনিটা একটু কম হয়েছে!" পুরো প্রশংসা না পেলেও নিজেকে সার্থকই মনে হয়েছে!
আজ এ পর্যন্তই। আপনাদের মতামত দিতে ভুলে যাবেন না যেন!
জেমস চকলেট দিয়ে সাজানোর আইডিয়া টা মজার... কেক বানানোর এত সহজ রেসিপির জন্য অনেক ধন্যবাদ... :)
ReplyDeleteঅসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে!
Deleteআসলেই এই আইডিয়াটা খুব ফটোজেনিক। আমরা এই আইডিয়াটা পেয়েছি টেলিভিশনে একটা কুকিং প্রোগ্রাম থেকে। তবে প্রোগ্রামটার নাম এখন মনে করতে পারছি না। মনে থাকলে ক্রেডিট দিতাম। :)
Accha Batita ki pressure cooker e akdom direct ooshiye dibo? BAtitar niche r kicchu dibo kina ?
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ প্রশ্নের জন্যে।
Deleteএখানে প্রেসার কুকারের ভিতরে বাটিটি সরাসরি বসিয়েছি। বাটির নিচে কোন কিছু দেয়ার প্রয়োজন নেই। প্রেসার কুকারের ভেতর কোন পানিও দিইনি। এবং চূলাটি রেখেছি একেবারে ধিমা আঁচে।
খেয়াল করে দেখবেন যে, প্রেসার কুকারের হুইসেল বা সিটি-টিও খুলে নিয়েছি আমরা।