২৬ জুন ২০১৩
ভালোবাসার মানুষদের জন্য আমরা কত কিছুই না করি। ভালোমন্দ কিছু রান্না করে খাবার পরিবেশন তার মধ্যে আন্যতম। এটা হয়তো সবাই স্বীকার করবেন যে, আমাদের মা'দের মধ্যে এটা যতোটা আছে সেটা হয়তো অন্য যে কারোর চাইতে বেশী। এটা আমাদের সংস্কৃতিরই একটা অংশ, যা আমাদের সামাজিকতাকে দেয় পরিপূর্ণতা। এইরকম আতিথেয়তা মনে হয় পৃথিবীর অন্য কোথাও দেখা যাবে না। আমরা যতটুকু আতিথেয়তা শিখেছি, সেটা অবশ্যই তাঁদের গুণেই।
এই ভালোমন্দ খাবারের কথা যখন আসছে, তখন এমন কিছু খাবারের কথা চলে আসে, যেগুলির প্রসেস খুব একটা ছোট নয়; সময় আর পরিশ্রম লাগে বেশি। কিন্তু ভালোবাসা বলে কথা! সেই ভালোবাসা হার মানায় সকল পরিশ্রম আর ক্লান্তিকে। আমরা যখন এই আদরের খাবার খাই, তখন আসলে আমরা সেই ভালোবাসার স্বাদই নিই। আর ঠিক এই কারণেই সেটা হয় আলাদা ধরণের মজাদার। সেই খাবারে থাকে আবেগ। স্বাদের ব্যাপারে সেখানে কোন ধরণের কার্পণ্য করা হয়নি। সময় বাঁচানোর জন্য খোঁজা হয়নি কোন সর্টকাট। ট্র্যাডিশনাল রান্নার প্রসেসের মতোই সেটা হয়েছে কিছুটা দীর্ঘ। প্রেত্যেকটা উপকরণ খুব সাবধানে আলাদাভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে হয়তো একসাথেই তৈরি করা যেত। কিন্তু তাতে পার্ফেকশন হয়তো আসতো না। পৃথিবীর অন্যান্য কিছু ট্র্যাডিশনাল খাবারও এইরকম লম্বা প্রসেসে তৈরি হয়। যে কারণে সেই খাবারগুলির নামডাকও সেইরকম। ফ্রেঞ্চ ভেজিটেবল ডিস রাটাটুই (Ratatouille), অথবা মেক্সিকান ট্র্যাডিশনাল সস মোলি (Mole) আজ হয়তো বিভিন্নভাবে তৈরি হচ্ছে, কারণ মানুষের আজ সময় কম। কিন্তু সেই ঐতিহ্যের মূল্য সবসময়ই আছে, সেখানে প্রত্যেকটি উপকরণকে আলাদাভাবে তৈরি করা হয়।
যাই হোক, অনেক কথা বলে ফেললাম। আসলে না বলে পারলামও না। এই কাঁচা কাঁঠালের জন্যে কম ঘোরাঘুরি হয়নি। সিজন তো শেষই হয়ে গিয়েছিল; এখন সব কাঁঠালই পাকা। আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম, তারপরেও কিভাবে যেন পাওয়া গেল একটি কাঁচা কাঁঠাল। হয়তো সেই ভালোবাসার জোরেই। আমরা সময় করতে পারছিলামনা বলে মা (নিলুফা কামাল) কাঁচা কাঁঠাল ভাপ দিয়ে ফ্রিজে তুলে রেখে দিয়েছিলেন। ভাপ না দিলে সেটা কাঁচা থাকার প্রশ্নই ছিল না। আমরা দু'দিন পরে সময় করতে পেরেছিলাম; আর তাই লাইট-ক্যামেরা-স্ট্যান্ড সবকিছু নিয়ে মা'র রান্নাঘরে হাজির!
কাঁঠালটি ছোট টুকরা করা হয়েছিল ভাপ দেওয়ার যাতে সুবিধা হয় সেজন্যে। আর আগে থেকেই ভিজিয়ে রাখা বুটের ডালের সাথে ভাপ দিয়ে রাখা কাঁচা কাঁঠালের টুকরা, রসুন, টুকরা করা আদা, সামান্য লবণ, সামান্য হলুদ গুঁড়া ও পানি দিয়ে ভালোমতো সিধ্ব করে নিলেন মা। ২৫-৩০ মিনিটের মধ্যেই সিধ্বের কাজ সম্পন্ন হয়ে যায়। সিধ্ব হয়ে গেলে ঠান্ডা হওয়ার জন্যে মা কিছুক্ষণের জন্য রেখে দিলেন।
এর মধ্যেই সেরে ফেললেন মসলাগুলির প্রস্তুতি। একটু ঝাল না হলেই যেন হয় না; তাই চার-পাঁচটি শুকনা মরিচ তেলে ভেজে উঠালেন। একই তেলে ১০-১২টার মতো আস্ত এলাচ ভেজে উঠালেন। এখন আবার ওই একই তেলে দেড় টেবিল চামচ পরিমাণ আস্ত জিরা ও এক চা চামচ পরিমাণ কাবাব চিনি ভেজে তারপর তেল ঝরিয়ে নিলেন।
এখন সমস্ত মসলাগুলি পাটায় খুব ভালোমতো বেঁটে নিলেন। আবার এই মসলার সাথে সিধ্ব কাঁচা কাঁঠাল ও বুটের মিশণটিও বেঁটে নিলেন। আপনারা পাটা ব্যবহার না করে ফুড প্রসেসর ব্যবহার করতে পারেন। তবে দু'টার টেক্সচার একটু আলাদা হবে। মা পাটার টেক্সচারটাকেই বেশি পছন্দ করেছেন।
মিশ্রণটি বাঁটা হয়ে গেলে তাতে ধনে পাতা কুঁচি, লবণ (স্বাদমতো), সামান্য চিনি ও ডিম দিয়ে খুব ভালোমতো মেখে নিলেন।
মিশ্রণটি ভালোমতো মাখানো হয়ে গেলে টিকিয়ার আকারে গোল গোল চ্যাপ্টা চ্যাপ্টা করে গরম তেলে ছেড়ে দিলেন মা। দুই পিঠ ভালোমতো ভাজা হয়ে গোল্ডেন ব্রাউন হয়ে গেলে তৈরি হয়ে গেল কাঁচা কাঁঠালের টিকিয়া।
আমরা এই টিকিয়া খেয়েছিলাম বিরানী আর সালাদের সাথে। এখনো মুখে লেগে আছে। এখন কাঁচা কাঁঠাল এতোটাই দুষ্প্রাপ্য হয়ে গেছে যে, হয়তো আগামী গ্রীষ্মের জন্যে অপেক্ষা করতে হতে পারে। তবে মা'র ফ্রিজে আমাদের জানা মতে ভাপ দেওয়া কিছু কাঁচা কাঁঠাল এখনো রয়েছে! হুমম... দেখা যাক!!
আজ এ পর্যন্তই। আমাদের এই লম্বা পোস্টে আপনাদের জন্যে ভালোবাসা রইলো। আশা করি মতামত দেবেন।
ভালোবাসার মানুষদের জন্য আমরা কত কিছুই না করি। ভালোমন্দ কিছু রান্না করে খাবার পরিবেশন তার মধ্যে আন্যতম। এটা হয়তো সবাই স্বীকার করবেন যে, আমাদের মা'দের মধ্যে এটা যতোটা আছে সেটা হয়তো অন্য যে কারোর চাইতে বেশী। এটা আমাদের সংস্কৃতিরই একটা অংশ, যা আমাদের সামাজিকতাকে দেয় পরিপূর্ণতা। এইরকম আতিথেয়তা মনে হয় পৃথিবীর অন্য কোথাও দেখা যাবে না। আমরা যতটুকু আতিথেয়তা শিখেছি, সেটা অবশ্যই তাঁদের গুণেই।
এই ভালোমন্দ খাবারের কথা যখন আসছে, তখন এমন কিছু খাবারের কথা চলে আসে, যেগুলির প্রসেস খুব একটা ছোট নয়; সময় আর পরিশ্রম লাগে বেশি। কিন্তু ভালোবাসা বলে কথা! সেই ভালোবাসা হার মানায় সকল পরিশ্রম আর ক্লান্তিকে। আমরা যখন এই আদরের খাবার খাই, তখন আসলে আমরা সেই ভালোবাসার স্বাদই নিই। আর ঠিক এই কারণেই সেটা হয় আলাদা ধরণের মজাদার। সেই খাবারে থাকে আবেগ। স্বাদের ব্যাপারে সেখানে কোন ধরণের কার্পণ্য করা হয়নি। সময় বাঁচানোর জন্য খোঁজা হয়নি কোন সর্টকাট। ট্র্যাডিশনাল রান্নার প্রসেসের মতোই সেটা হয়েছে কিছুটা দীর্ঘ। প্রেত্যেকটা উপকরণ খুব সাবধানে আলাদাভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে হয়তো একসাথেই তৈরি করা যেত। কিন্তু তাতে পার্ফেকশন হয়তো আসতো না। পৃথিবীর অন্যান্য কিছু ট্র্যাডিশনাল খাবারও এইরকম লম্বা প্রসেসে তৈরি হয়। যে কারণে সেই খাবারগুলির নামডাকও সেইরকম। ফ্রেঞ্চ ভেজিটেবল ডিস রাটাটুই (Ratatouille), অথবা মেক্সিকান ট্র্যাডিশনাল সস মোলি (Mole) আজ হয়তো বিভিন্নভাবে তৈরি হচ্ছে, কারণ মানুষের আজ সময় কম। কিন্তু সেই ঐতিহ্যের মূল্য সবসময়ই আছে, সেখানে প্রত্যেকটি উপকরণকে আলাদাভাবে তৈরি করা হয়।
যাই হোক, অনেক কথা বলে ফেললাম। আসলে না বলে পারলামও না। এই কাঁচা কাঁঠালের জন্যে কম ঘোরাঘুরি হয়নি। সিজন তো শেষই হয়ে গিয়েছিল; এখন সব কাঁঠালই পাকা। আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম, তারপরেও কিভাবে যেন পাওয়া গেল একটি কাঁচা কাঁঠাল। হয়তো সেই ভালোবাসার জোরেই। আমরা সময় করতে পারছিলামনা বলে মা (নিলুফা কামাল) কাঁচা কাঁঠাল ভাপ দিয়ে ফ্রিজে তুলে রেখে দিয়েছিলেন। ভাপ না দিলে সেটা কাঁচা থাকার প্রশ্নই ছিল না। আমরা দু'দিন পরে সময় করতে পেরেছিলাম; আর তাই লাইট-ক্যামেরা-স্ট্যান্ড সবকিছু নিয়ে মা'র রান্নাঘরে হাজির!
কাঁঠালটি ছোট টুকরা করা হয়েছিল ভাপ দেওয়ার যাতে সুবিধা হয় সেজন্যে। আর আগে থেকেই ভিজিয়ে রাখা বুটের ডালের সাথে ভাপ দিয়ে রাখা কাঁচা কাঁঠালের টুকরা, রসুন, টুকরা করা আদা, সামান্য লবণ, সামান্য হলুদ গুঁড়া ও পানি দিয়ে ভালোমতো সিধ্ব করে নিলেন মা। ২৫-৩০ মিনিটের মধ্যেই সিধ্বের কাজ সম্পন্ন হয়ে যায়। সিধ্ব হয়ে গেলে ঠান্ডা হওয়ার জন্যে মা কিছুক্ষণের জন্য রেখে দিলেন।
এর মধ্যেই সেরে ফেললেন মসলাগুলির প্রস্তুতি। একটু ঝাল না হলেই যেন হয় না; তাই চার-পাঁচটি শুকনা মরিচ তেলে ভেজে উঠালেন। একই তেলে ১০-১২টার মতো আস্ত এলাচ ভেজে উঠালেন। এখন আবার ওই একই তেলে দেড় টেবিল চামচ পরিমাণ আস্ত জিরা ও এক চা চামচ পরিমাণ কাবাব চিনি ভেজে তারপর তেল ঝরিয়ে নিলেন।
এখন সমস্ত মসলাগুলি পাটায় খুব ভালোমতো বেঁটে নিলেন। আবার এই মসলার সাথে সিধ্ব কাঁচা কাঁঠাল ও বুটের মিশণটিও বেঁটে নিলেন। আপনারা পাটা ব্যবহার না করে ফুড প্রসেসর ব্যবহার করতে পারেন। তবে দু'টার টেক্সচার একটু আলাদা হবে। মা পাটার টেক্সচারটাকেই বেশি পছন্দ করেছেন।
মিশ্রণটি বাঁটা হয়ে গেলে তাতে ধনে পাতা কুঁচি, লবণ (স্বাদমতো), সামান্য চিনি ও ডিম দিয়ে খুব ভালোমতো মেখে নিলেন।
মিশ্রণটি ভালোমতো মাখানো হয়ে গেলে টিকিয়ার আকারে গোল গোল চ্যাপ্টা চ্যাপ্টা করে গরম তেলে ছেড়ে দিলেন মা। দুই পিঠ ভালোমতো ভাজা হয়ে গোল্ডেন ব্রাউন হয়ে গেলে তৈরি হয়ে গেল কাঁচা কাঁঠালের টিকিয়া।
আমরা এই টিকিয়া খেয়েছিলাম বিরানী আর সালাদের সাথে। এখনো মুখে লেগে আছে। এখন কাঁচা কাঁঠাল এতোটাই দুষ্প্রাপ্য হয়ে গেছে যে, হয়তো আগামী গ্রীষ্মের জন্যে অপেক্ষা করতে হতে পারে। তবে মা'র ফ্রিজে আমাদের জানা মতে ভাপ দেওয়া কিছু কাঁচা কাঁঠাল এখনো রয়েছে! হুমম... দেখা যাক!!
আজ এ পর্যন্তই। আমাদের এই লম্বা পোস্টে আপনাদের জন্যে ভালোবাসা রইলো। আশা করি মতামত দেবেন।
EXCELENT RECEIPE
ReplyDeletethank you! :)
DeleteThanks a lot for the nice idea! canned kathal is all over the year available here. i surely can get one and make this kabab :)
ReplyDeleteThank you very much for the visit and the comment! :)
DeleteIts really nice to know that you've liked it.....