Tuesday 25 February 2014

ধোঁয়া-তোলা এক কাপ চা-এর আড্ডায়......

২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৪

Food Photography, Dhaka, Bangladesh


বাঙ্গালীর চা-এর প্রতি একটা আলাদা ভালোবাসা জন্মে গেছে বহুবছর হলো। আর এই ভালোবাসার সাথে আরও বেশকিছু সংস্কৃতির চর্চা চলে আসছে। চা-এর টেবিলে আড্ডা এরকমই একধরণের সংস্কৃতি। আড্ডা যেকোন জায়গায়ই হতে পারে। কিন্তু হাতের কাছে এক কাপ ধোঁয়া তোলা চা থাকলে আড্ডাটা যেন জমে বেশি। আর বহুবছর ধরে চলে আসা এই চা পানের সংস্কৃতিও যে কত রকম হতে পারে সেটা বলাই বাহুল্য। এক কাপ চা কত জনে কত ভাবে খেতে পছন্দ করেন, সেটা লিখতে গেলে আজ লেখাই শেষ করা যাবে না। তবে চায়ের রঙ যে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, সেটা কিন্তু সবাই এক বাক্যে স্বীকার করবেন। ফটোগ্রাফার হিসেবে রঙের দিকে আমাদের একটা টান থেকেই যায়। কাঁচের কাপে উত্তপ্ত জলীয় বাষ্প-সহ রঙ্গিন সেই তরলের কাছ থেকে একধরনের হাতছানি অনুভব করি। আর সেই অনুভূতিটাই আজ এই পোস্টে দেখাবার চেষ্টা করেছি মাত্র।

Food Photography, Dhaka, Bangladesh


চা-এর সাথে "টা" হলেও যেন মন্দ হয় না। ওটাও যেন সংস্কৃতির একটা অংশ হয়ে গেছে। এই "টা" বলতে একেক জন একেক ভাবে বুঝে নেবেন, কারণ এই "টা" আসলেই পেট-পূজার একটা অংশ। শুধু চা বললেও সেখানে এই তরল ছাড়াও আরও কিছু যে থাকবে সেটা বলে না দিলেও সবাই যেন ধরেই নেয়। আর এখানেই চলে আলাদা কিছু করার রকমারি প্রয়াস। টেবিল দখলের খেলায় বাজার থেকে কেনা রেডিমেড বিস্কুট-চানাচুর বেশ খানিকটা এগিয়ে থাকলেও কখনো কখনো তাদেরকে কেউ কেউ চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে কার্পণ্য করেন না। সেটা প্রতিদিন না হলেও অন্তঃত নিয়মিতভাবেই অনেকেই চেষ্টাটা চালিয়ে থাকেন। এটা ঠিক যে চা-এর আড্ডায় এই "টা" যোগ করতে কষ্টটা মাঝে মাঝে বেশ খানিকটা বেশিই মনে হয়। কিন্তু এই কষ্টের মাঝে যে আন্তরিকতা থাকে তা কিন্তু চা-এর আড্ডার অতিথিরা মনে করতে ভোলেন না। বিস্কুট-চানাচুর কিন্তু মন কেড়ে নেয়া এই কাজটা করতে পারে না।

Food Photography, Dhaka, Bangladesh


এতক্ষণে অন্তঃত বুঝে গেছেন যে আজ কোন রেসিপি নিয়ে কথা বলবো না। তবু ছবির এই আদা-চা-এর সাথে "টা"-টা কি ছিল সেটা না বললেই নয়। আলুর পাকোড়া...... সাথে কাঁচা মরিচের সস। শীতের শেষে এসে জ্বর-ঠান্ডায় আক্রান্ত হবার ঠিক আগ মুহূর্তে ধোঁয়া-তোলা আদা-চা, সাথে গরম গরম পাকোড়া আর কাঁচা মরিচের সুবাস-তোলা সবুজ সস - কিছু বলার থাকে না! এই রকম নাস্তার আইডিয়া সবার কাছেই আছে। প্রতিটা মানুষ তার নিজের আলাদা জগত থেকে সেই আইডিয়া নিয়ে আসবেন - যেকোন দু'টি আইডিয়া মিলেও যেতে পারে; না-ও মিলতে পারে। সেখানেই মজা!

যাই হোক শুধু একটা আড্ডা দিয়েই আজকে শেষ করছি। মাঝে মাঝে শুধু আড্ডা দেওয়া ছাড়াই আর কিছুই যেন করতে ইচ্ছে করে না। আজ এমনই একটা দিন। ভালো থাকবেন সবাই। নতুন কোন পোস্ট নিয়ে আসছি শিগগিরই।

Sunday 16 February 2014

খাবার টেবিলের মধ্যমণি...... (ফুলিকপির রোস্ট)

১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৪


শীতের প্রায় শেষ প্রান্তে চলে আসলেও বাজারে ফুলকপির কিন্তু কমতি নেই এখনো। কিছু কিছু ফুলকপির সাইজ দেখে সত্যিই বাহবা দিতে হয়। মা (নিলুফা কামাল) ফুলকপির একটা রেসিপি মোটামুটি রেগুলারই করে থাকেন। কিছুদিন ধরেই চিন্তা করে আসছিলাম যে সেই রেসিপিটা করে দেখবো। সেই সময় এসেছে শীতের শেষে এসেই। তাই এখন এই পোস্ট। মা'র হাতের যাদু আমাদের এই রেসিপির মাধ্যমে কিছুটা হলেও তুলে ধরার একটা প্রয়াস থাকবে। ফুলকপির রোস্ট আরও অনেক রন্ধনশিল্পীরাই করে থাকেন। তবে সেই রেসিপিগুলি খুব একটা সহজ বলে বলা যাবে না মনে হয়। আমরা সবসময় সহজ রেসিপি খুঁজি। তাই কঠিন রেসিপি দেখলে কিছুটা হাই-তোলা-মাথা-চুলকানো অবস্থার উদ্রেক হয়!

তবে এবারে ভালোই হয়েছে যে রেসিপির ফাঁকফোকড় খুঁজতে খুঁজতে মা'র এই রেসিপিটা পেয়ে গেলাম। এটা অন্যান্য ফুলকপির রোস্ট থেকে বেশ আলাদা, আর অপেক্ষাকৃত সহজ। আর স্বাদের কথা কি আর বলবো। প্রথমবার মা'র হাতের এই খাবারটা খেয়েই তো সম্মোহিত হয়ে পড়েছিলাম। তারপর থেকেই এই রেসিপিটা আমাদের রান্নাঘরে করার জন্য উন্মুখ হয়ে ছিলাম। যাই হোক, আজকের রেসিপি হলো ফুলকপির রোস্ট (Roasted Whole Cauliflower)। চলুন ঘুরে আসি রান্নাঘর থেকে।



ফুলকপির রোস্টটির রান্না দুই ধাপে সম্পন্ন হবে। প্রথম ধাপটি হবে ফুলকপি সিদ্ধ করা; আর দ্বিতীয় ধাপটি হবে গ্রেভি-টা রান্না করা।



বাজার থেকে ফুলকপি কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে, ফুলকপিটা যেন টাটকা থাকে। টাটকা না হলে ফুলকপির ফুলগুলি একত্রে থাকতে চাইবে না; আর তাহলে রেসিপির সবচেয়ে বড় সৌন্দর্যটাই হারিয়ে বসবে। ফুলকপির ডাল কেটে একটি বড় পাত্রে পর্যাপ্ত পানি নিয়ে (যাতে পানিতে ফুলকপিটা পুরোপুরি ডুবে যায়) তাতে এক থেকে দেড় চা চামচ পরিমাণ লবণ দিয়ে ঘন্টাখানেক ভিজিয়ে রাখি। লবণ পানিতে ফুলকপি ভিজিয়ে রাখার কারণ হচ্ছে ফুলকপির ভিতরে কোন পোকা-মাকড় থাকলে তা যেন বের হয়ে যায়।







এখন একটি বড় সস-প্যানে তিন টেবিল চামচ পরিমাণ টমেটো সসের সাথে এক টেবিল চামচ ভিনেগার, আদা-রসুন বাঁটা, মরিচ গুঁড়া ও লবণ দিয়ে ভালভাবে মিশিয়ে নিই।




এরপর হাঁড়িটিকে চূলায় বসিয়ে ঐ সসের মিশ্রণের উপর ফুলকপির ফুলের দিকের সাইডটা উপুড় করে বসিয়ে দিই। মিনিট দু'য়েকের জন্যে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিই।



মিনিট দু'য়েক পরে ঢাকনা সরিয়ে ফুলকপিটি সাবধানে উলটে দিই। এবার ফুলকপির গোড়ার দিকটা হাঁড়ির উপরে বসবে। চূলা থাকবে মিডিয়াম আঁচে। এক্ষেত্রে আর ঢাকনা দিচ্ছি না। ঢাকনা দিলে ফুলকপি থেকে অতিরিক্ত পানি ছাড়বে, যার ফলে ফুলকপিটি নরম হয়ে যাবে।




ওই মিডিয়াম আঁচেই পানিটা পুরোপুরি টেনে নেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে চূলা বন্ধ করে সিদ্ধ ফুলকপিটি রেখে দিই।


এবার হচ্ছে গ্রেভি তৈরির পালা। আমরা এখানে পিঁয়াজ কুঁচির পরিবর্তে পিঁয়াজ বাঁটা ব্যবহার করছি যাতে গ্রেভি-টা বেশ মশৃণ ও মিহি হয়। খাবার তেলের সাথে আমরা কিছুটা ঘি-ও ব্যবহার করেছি। আমরা রাইস ব্র্যান আয়েল ব্যবহার করেছি; আপনি যেকোন তেল ব্যবহার করতে পারেন। আর ঘি ব্যবহার করেছি একটা সুন্দর গন্ধ পাবার জন্য।











কড়াইতে তেল গরম হলে তার সাথে কয়েক চামচ ঘি দিই। এরপর এতে দিই পিঁয়াজ বাঁটা, পোস্ত বাঁটা (Poppy Seeds Paste), আদা-রসুন বাঁটা, শুকনা মরিচ গুঁড়া, লবণ, গরম মসলা গুঁড়া ও সামান্য চিনি। মসলা কষানোর সময় প্রয়োজন অনুযায়ী পানি দিতে হবে। গ্রেভি-টা আমরা কতটুকু ঘন চাচ্ছি, সেটার উপরে নির্ভর করবে পানির পরিমাণ।





গ্রেভির মসলা ভালোমত কষানো হয়ে যাবার পরে কিছু মসলা আলাদা বাটিতে তুলে রাখি। গরম অবস্থাতেই এই মসলার সাথে আরও একটু ঘি দিই।







কষানো মসলার মধ্যে আগে থেকেই সিদ্ধ করে রাখা আস্ত ফুলকপিটি দিয়ে দিই। এরপর ফুলকপির উপরে ঘি-যুক্ত তুলে রাখা গ্রেভির মসলা ফুলকপির উপরে ভালোভাবে ছড়িয়ে দিই। এরপর চূলার আঁচ একেবারে ধিমা রেখে ঢাকনা দিয়ে রেখে দিই চার-পাঁচ মিনিটের জন্যে। এই সময়ের মধ্যে ঢাকনা সরানো ঠিক হবে না, কারণ আমরা চাচ্ছিলাম ঘি-যুক্ত গ্রেভির মসলাটা যেন তার ফ্লেভারটা ধরে রাখতে পারে। ঠিক পরিবেশনের পূর্বেই ঢাকনা সরিয়ে নিলে সুঘ্রাণসহ গরম গরম সার্ভ করা যাবে।


হয়ে গেল আমাদের ফুলকপির রোস্ট (Roasted Whole Cauliflower)। এটা এমন একটা ডিস যা খাবার টেবিলের মধ্যমণি হবে। আগেও বলেছি যে ফুলকপির রোস্টের জন্যে এটাই একমাত্র রেসিপি নয়। অনেকে অনেকভাবে এটা তৈরি করে থাকেন। আমরা আমাদের মা'র রেসিপি অনুসরণ করেছি।


আপনাদের ফিডব্যাক দিতে ভুলে যাবেন না যেন। আপনারাই তো আমাদের অনুপ্রেরণা। আশা করি আমাদের এগিয়ে যাবার জন্যে অনুপ্রেরণা যোগাতে ভুলবেন না।

Thursday 13 February 2014

বসন্তের সুবাতাসে...... (ধনে পাতার চাটনি)

১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৪


বসন্তের প্রথম দিনে বাসন্তী রঙের কোনকিছু পোস্ট দেব চিন্তা করছিলাম। পরে মনে হল, বাসন্তী হতে হলে শুধু বসন্তের প্রথম দিনে হতে হবে কেন? সারা বসন্তের যেকোন দিনই তো হতে পারে, তাই না? তবে আজ সকালের কিঞ্চিত ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাসটা মনে করিয়ে দিল যে শীত গেছে বেশিদিন হয়নি। তবে বাতাসটা গায়ে লাগলেই বোঝা যায় যে এটা বসন্তের সুবাতাস। আর এই সুবাতাস যেখানেই লেগেছে, সেখানেই বাসন্তী রঙের ছাপ রেখে গেছে।

যাই হোক, এই বসন্তের দিনে আমরা এমন কিছু শেয়ার করতে চাই যেটা খুব নতুন কিছু না হলেও অন্তত নতুন ঋতুর নতুন দিনে তৈরি করার মতো। আর ঐ যে বললাম না, শুধু বসন্তের প্রথম দিনে কেন; অন্য দিনগুলি কি দোষ করলো? সেটাই... আজকের এই রেসিপি একবার তৈরি করে মোটামুটি বসন্তের কয়েকটা দিনই খাওয়া যাবে; বসন্তকে ধরে রাখবে। আর শুধু শুধুই বসন্তের কথা বলছি। এই রেসিপি মোটামুটি বছরের যেকোন সময়েই তৈরি করতে পারবেন। মানে সারাবছরই বসন্ত! ধনে পাতা পাওয়া যায় না এমন সময় আছে নাকি? তবে বসন্তকে উপলক্ষ ধরলে মনে একটা বাতাস লাগে আরকি! যাই হোক চলুন আমাদের আজকের রেসিপি হলো ধনে পাতার চাটনি (Coriander Leaf Chutney)। চলুন ঘুরে আসি এই অত্যন্ত সহজ রেসিপিটা থেকে।



 ধনে পাতার চাটনি একেক জনে একেকভাবে করলেও আমরা এখানে ধনে পাতার সাথে রসুন, কাঁচা মরিচ ও তেঁতুল একসাথে শিলপাটায় বেঁটে নিয়েছি। আজকাল যান্ত্রিক যুগে ব্লেন্ডারের মত যন্ত্র থাকতে কতজনই বা শিলপাটা ব্যবহার করে। তবে যারা এই দু'য়ের মাঝে পার্থক্য ধরতে পারেন, এবং সেই পার্থক্যটাই খোঁজেন, তাদের কাছে শিলপাটার কদর আজও আছে। ব্লেন্ডারে পাউডারের মত মিহি পেস্ট করা সম্ভব। কিন্তু শিলপাটার কাজে সেটা অতটা মিহি হবে না; সেখানে পেস্টের মাঝেও জিহবায় লাগার মত কিছু আঁশ রয়ে যাবে। কাজেই সেটা সেই পেস্টকে একটা মিহি texture দেবে।





বেঁটে নেয়ার পরে আলাদাভাবে যোগ করেছি পরিমাণমত লবণ ও সরিষার তেল। শিলপাটায় বাঁটার ফলে চাটনিটা কিছুটা আঁশযুক্ত হবে। আর চাটনির ঝাল, ঝাঁঝ (সরিষার তেলের কারণে) ও টকের (তেঁতুলের কারণে) পরিমাণ নিজের পছন্দমত বাড়াতে বা কমাতে পারেন। অনেকে আবার চাটনিতে টক-ঝালের স্বাদের সাথে কিছুটা মিষ্টিও পছন্দ করেন বলে কিছুটা চিনিও দিয়ে থাকেন।



যাই হোক আমাদের ধনে পাতার চাটনি (Coriander Leaf Chutney) হয়ে গেছে। এখন এটা রেফ্রিজারেটরে রেখে বেশ কিছুদিন ধরে খাওয়া যাবে; ধরে রাখা যাবে বসন্ত! আজ বসন্ত; তাই শুধু বসন্ত বসন্তই করবো! সরিষার তেলটা এখানে প্রিজার্ভেটিভ হিসেবে কাজ করবে। অনেক খাবারের সাথেই স্বাদ-বর্ধক হিসেবে এই চাটনি চলে। অনেক খাবারের সাথে যোগ হয়ে নতুন মাত্রা দেবে।


আপনাদের মতামত দিতে ভুলে যাবেন না যেন। আপনাদের মতমতই আমাদের সামনে এগুনোর শক্তি যোগায়।

Monday 10 February 2014

ঐতিহ্য থেকেই আলাদা কিছু...... (রাইস ফ্লাওয়ার এগ রোল)

১০ ফেব্রুয়ারী ২০১৪

Food Photography, Dhaka, Bangladesh

বেশ ক'মাস আগে আমরা আমাদের ফেইসবুক পেইজে একটা ছবি শেয়ার করেছিলাম। সেটার রেসিপি তখন দেওয়া সম্ভব হয়নি কারণ আরও কিছু সময় লেগেছিল প্রসেসটা ম্যাচিউর করতে। প্রসেসের ছবি তুলে ব্লগ পোস্টের জন্য তৈরিও হয়েছিলাম। কিন্তু নানা কারণে পোস্টটা পিছিয়ে গিয়েছিল। আর পেছাতে পেছাতে সেই পোস্ট আর হয়েই ওঠেনি। যাই হোক, সেই সময় মনে হয় আবার এসেছে। এবার মোটামুটি করে বলতে পারি যে সেই রেসিপি আপনাদের সামনে তুলে ধরতে পেরেছি।

এই রেসিপি হচ্ছে রাইস ফ্লাওয়ার এগ রোল (Rice Flour Egg Rolls)। রাইস ফ্লাওয়ার, মানে চালের গুঁড়া দিয়েই রোল। এক প্যাকেট চালের গুঁড়া হাতে এসে পৌঁছেছিল স্যাম্পল হিসেবে। ঢেকিছাঁটা চালের গুঁড়া। সেটা কোথা থেকে কিভাবে এসেছে, সেটাই একটা ইতিহাস। যখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সবকিছুই যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে, তখন গ্রামের মহিলাদের নিজের হাতে তৈরি চালের গুঁড়া আলাদা একটা ব্যাপার। মুহুর্তের মাঝে একেবারে ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে তৈরি এই চালের গুঁড়ার একটা আলাদা কদর তৈরি হল আমাদের বাড়িতে। তাই আলাদা রেসিপিরও ডাক পড়লো। কিন্তু আলাদা তেমন কিছু খুঁজে পাওয়া গেল না। তখন ঠিক করলাম খুব পুরাতন ঐতিহ্যবাহী একটা রেসিপিকেই নতুনভাবে সাজাবো। চালের গুঁড়ার পিঠা বা অন্য নামে অনেকের কাছেই এটা প্রচলিত। আমরা কিছুটা ভিন্নভাবে সেই রেসিপিকেই মোটামুটিভাবে অনুসরণ করেছি। চলুন তবে ঘুরে আসি রান্নাঘর থেকে।


Food Photography, Dhaka, Bangladesh

খুব কম উপকরনেই তৈরি হয়ে যাবে আমাদের আজকের এই আইটেম। চালের গুঁড়া ছাড়া ডিম, ধনে পাতা, পিঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, হলুদ গুঁড়া, লবণ ও তেল ছাড়া আর কিছুই লাগবে না এই রান্নায়।









প্রথম কাজ হলো চালের গুঁড়া থেকে গোলা বা ব্যাটার তৈরি করা। একটি বাটিতে এক কাপ পরিমাণ চালের গুঁড়ার সাথে মিহি কুঁচি পিঁয়াজ, মিহি কুঁচি কাঁচা মরিচ, মিহি কুঁচি ধনে পাতা, একটি ডিম, পরিমাণমত লবণ, সামান্য হলুদ গুঁড়া দিয়ে পরিমাণমত পানি দিয়ে একটি গোলা বানিয়ে নিয়েছি। গোলাটি খুব বেশি পাতলাও হবেনা, আবার খুব বেশি ঘনও হবে না।






একটা ননস্টিক ফ্রাই প্যানে সামান্য তেল (আমরা রাইস ব্র্যান অয়েল ব্যবহার করেছি; আপনি যেকোন তেল ব্যবহার করতে পারেন) দিয়ে তাতে দুই থেকে তিন চামচ পরিমাণ ব্যাটার বা গোলা দিয়ে প্যানের মধ্যে চারিদিকে ছড়িয়ে দিই। এরপ ঢাকনা দিয়ে এক-আধ মিনিটের জন্যে ঢেকে দিই।







ঢাকনা সরালেই দেখবো যে ব্যাটারটি একটা পিঠায় রূপ নিয়েছে। এবার পিঠাটিকে একবার উলটে দিই। প্যানে থাকতেই গরম অবস্থায় পিঠাটিকে রোল বানিয়ে ফেলি।


এখন শুধু রোলগুলিকে ছোট করে কেটে পরিবেশন করার পালা। হয়ে গেল আমাদের রাইস ফ্লাওয়ার এগ রোল (Rice Flour Egg Rolls)।  বিকেল বা সন্ধ্যার নাস্তা হিসেবে মন্দ নয় একেবারেই। স্পাইসি কোন সসের সাথে বেশ যায়। অল্প হলুদ গুঁড়ার কারণে রোলগুলি হাল্কা হলুদাভ বর্ণ নেবে; তার সাথে ধনে পাতা আর কাঁচা মরিচের সবুজের উঁকিঝুকিতে বেশ দৃষ্টিনন্দন একটা নাস্তা হবে। যে কেউ যে লুফে নিয়ে খাবে, সেটা অন্তত বলে দিতে পারি। এখন আপনার ট্রাই করার পালা।


Food Photography, Dhaka, Bangladesh

Food Photography, Dhaka, Bangladesh

Food Photography, Dhaka, Bangladesh

আপনাদের মতামত দিতে ভুলে যাবেন না যেন। আপনাদের মতামতই আমাদের এগিয়ে যাবার সাহস যোগায়।