Friday, 31 May 2013

আমের ঝুরি আচার... সেই ঘিয়ে ভাজা দিনগুলি আবার আসবে কি?

৩১ মে ২০১৩



খাবো, খাবো! আমের ঝুরি আচার খাবো! একসময় এই আচারটা আমার সেইরকম ফেভারিট ছিল। মা (শরীফুন নাহার) যত ঝুরি আচার তৈরি করেছিলেন, তার বেশিরভাগই মনে হয় আমার পেটেই স্থান পেয়েছে। প্রায় প্রতিদিনের দুপুরের আর রাতের খাবারের সাথে আমের আচার থাকতোই। আর সেখানে এই ঝুরি আচারটা সর্বদাই এগিয়ে থাকতো আমার প্লেটে ঝাঁপিয়ে পরার জন্য! তবে কেন জানি মা অনেকদিন এই আচারটা বানান না। অনেকটা ভুলেই গিয়েছিলাম সেই পুরোনো দিনগুলির কথা। আর তাই মা যখন এই বছর আমের ঝুরি আচার বানাবার কথা বললেন, আমি একটু নড়েচড়ে বসলাম। হাত অটোমেটিক এগিয়ে গেল ক্যামেরা আর লাইটের দিকে। তারপরে যা ঘটলো, তা তো এখানেই দেখতে পাচ্ছেন। একদিকে যেমন আচার বানাবার প্রস্তুতি চলে, তার সাথে পাল্লা দিয়ে শব্দ করে চলে ক্যামেরার শাটার! ছবিগুলি তোলার জন্য আচার বানাবার সময় মা'কে যে বিরক্তি দিয়েছি তা বোঝা যাচ্ছিলো বার বার "আর জ্বালাস না তো!" শুনতে শুনতে। কিন্তু মা'র চোখে মুখে এই বিরক্তি মোটেও ছিল না; বরং ছিল পুরোনো দিনের স্মৃতিমাখা এক আত্মতৃপ্তি।





প্রতিটা আচারের ক্ষেত্রেই সবচেয়ে কমন ব্যাপার হলো সেটা আম বা যেকোন ফলই হোক না কেন, সেটাকে নতূন বউ-এর মত যত্ন নিতে হয়। আমের মুখ কেটে ডুবো পানিতে আমগুলি অনেকক্ষন ডুবিয়ে রাখলেন মা, ঠিক যেমনটি করেছিলেন আমের টক আচার বানাবার সময়। এরপর আমগুলি পানি থেকে তুলে সম্পূর্ণ শুকনা কাপড়ে মুছে একটা শুকনা গামলাতে রাখলেন। এই ক্ষেত্রে গামলা যেমন সম্পূর্ণ শুকনা থাকতে হবে, ঠিক তেমনি হাতও হতে হবে একেবারে পানিহীন।



পরিষ্কার ও শুকনা পীলার (peeler) দিয়ে আমগুলির খোসা ছাড়িয়ে নিলেন। এরপর আমগুলিকে ভেজিটেবল গ্রেটার দিয়ে একদম কুঁচি করে লবণ মাখিয়ে দু'ঘন্টার জন্য রেখে দিলেন। দু'ঘন্টা পর দেখা গেল যে লবণ দেওয়ায় আম বাড়তি পানিগুলি ছেড়ে দিয়েছে। এখন এই আমগুলিকে খুব সাবধানে পানি ঝরিয়ে আরেকটি শুকনো গামলায় রাখলেন।








এরপর এতে যোগ হলো আদা কুঁচি, রসুন কুঁচি, বিচি ফেলে দেয়া শুকনা মরিচ কুঁচি, প্রচুর পরিমাণে সরিষার তেল, ভিনেগার ও চিনি। সবগুলি উপকরণকে খুব ভালোভাবে মেশালেন মা।





ব্যাস রেডি হয়ে গেল আমের ঝুরি আচার। এখন আচারগুলি একটি পরিষ্কার এবং শুকনো কাঁচের বোতলে এমনভাবে রাখা হলো যেন তেল ও ভিনেগারে আচারগুলি টইটুম্বুর থাকে।

আজ এ পর্যন্তই। এই গ্রীষ্ম শেষ হবার আগেই আম নিয়ে আরও অনেক কিছু নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হবো আশা রাখি। আপনাদের মতামত দিতে ভুলে যাবেন না যেন।

আমের আচার নিয়ে আমাদের অন্য পোস্টগুলি দেখুনঃ
আমের কাশ্মিরী আচার
আমের টক আচার

Wednesday, 22 May 2013

খাসির নেহারি...... আবারও মাদার'স রেসিপি!

২২ মে ২০১৩

একনাগারে সকালের নাস্তায় রুটি-ভাজি-ডিম-ডাল ভুনা খেয়ে কিছুটা একঘেয়েমি চলে আসছিল। সকালের নাস্তার মেনু নিয়ে একদিন আলাপ করছিলাম। কথাটা মা'র (শরীফুন নাহার) কানে গেল। মা বললেন, কালকে মেনুতে নতুন কিছু করা যাক। সকাল থেকেই কিছুটা বৃষ্টি বৃষ্টি আবহাওয়া থাকায় মেনুতে স্থান পেল খাসির নেহারি। এই খাবারটা খুব মুখরোচক হলেও এতে কোলেস্টেরলের বেশ আধিক্য রয়েছে। তাই এটা রেগুলার আইটেম হিসেবে রাখা সম্ভব নয়। তবে মাঝে মধ্যে চলতেই পারে। তাতে মেনুতে বৈচিত্র আসে; মুখে আসে স্বাদের ভিন্নতা।



খাসির পায়াগুলি ভালোমত পরিষ্কার করে নিলেন মা। এখানেও মা প্রেসার কুকার ব্যবহার করেছেন। পায়াগুলি প্রেসার কুকারে দিয়ে তাতে লবণ, মরিচ গুঁড়া, আদা-রসুন বাটা, তেল এবং পরিমানমত পানি দিয়ে দেড় ঘন্টার জন্য চূলায় চাপিয়ে দিলেন।





ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি যে মা রান্নায় কম মসলা ব্যবহার করেন। তাতে কিন্তু স্বাদের বিন্দুমাত্র কমতি থাকে না। হয়তো এটাই আমার মায়ের হাতের রান্নার যাদু। কারণ, দেড় ঘন্টা পর যখন চূলা থেকে প্রেসার কুকারটা নামানো হলো আর বাটিতে পাঁচ ফোড়ন গুঁড়া ও ধনে পাতা কুঁচি দিয়ে নেহারিটা আমার সামনে দেয়া হলো, তখন নেহারির গন্ধই বলে দেয় এর স্বাদের মাত্রা কতখানি। তাড়াতাড়ি ছবি তোলার পর্ব শেষ করলাম; কারণ এতো সুঘ্রাণের মধ্যে খালি পেটে কাজ করা কষ্টকর। গরম গরম রুটির সাথে নেহারি... মমম... অমৃত!

আজ এ পর্যন্তই। আরও মাদার'স রেসিপি আসছে সামনের দিনগুলিতে। আর হ্যাঁ, মতামত দিতে ভুলে যাবেন না যেন। আপনাদের মতামত আমাদের কতটা আনুপ্রাণিত করে সেটা বলা মুসকিল।

Sunday, 19 May 2013

মগজ ভুনা... মাদার'স রেসিপি বলে কথা!

১৯ মে ২০১৩

আমাদের দেশের বেশীরভাগ রাধুনীরাই যে রান্নার কলাকৌশল তাদের মা-শাশুড়ীদের কাছ থেকে পেয়ে থাকেন সেটা বলার জন্য কোন সার্ভের দরকার বলে মনে হয় না। পরের জেনারেশনের মধ্যে সেটা পরিবর্তন হলেও হতে পারে, তবে এখনও আমাদের দেশের সেই ঐতিহ্য বজায় আছে।  মা যেমন চান কন্যাকে তার কিছু স্পেশাল রেসিপি শিখিয়ে দিতে, তেমনি শাশুড়ীও চান তার পুত্রবধূর হাতে তার মতই রান্নার ছোঁয়া থাকুক। আমাদের বাড়িতেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি।



আজ যে রেসিপিটা মা (শরীফুন নাহার) শেখাতে যাচ্ছেন তা হলো আপনার আমার সবার প্রিয় 'দি মগজ ভুনা'! যেহেতু মগজে ফ্যাট এবং কোলেস্টেরলের আধিক্য রয়েছে, তাই এটা সবসময় খাবার রেসিপি নয়। এবারে বৈশাখ-জৈষ্ঠ মাসে বেশ বৃষ্টি হয়েছে (প্রধাণত নিম্নচাপের কারনে), যেটা সবসময় হয় না।  গরমের মধ্যে খুব বেশী মসলাদার খাবার খেয়ে আরাম পাওয়া যায় না। বৃষ্টির কারনে আবহাওয়া কিছুটা ঠান্ডা থাকায় আজকের প্রধান মেনুতে গরুর মগজ ভুনার জায়গা হয়েছে। একটু নড়েচড়ে বসলাম, কারন আজ মা'র কাছ থেকে আরও একটি রেসিপি পেতে যাচ্ছি।



মগজটা পানি দিয়ে ভালোমত ধুয়ে একটু বেশী পানিতে হলুদ গুঁড়া দিয়ে মা সিদ্ধ করতে চূলায় বসালেন। মগজটি সিদ্ধ হতে প্রায় দশ-পনের মিনিটের মত লাগলো।



সিদ্ধ হবার পর পানি ঝরিয়ে মগজটি তুলে চৌকোনা করে ছোট ছোট টুকরা করলেন মা - দেখে ঠিক পনিরের টুকরার মত মনে হচ্ছিলো।



মা চূলায় এবার একটি নন-স্টিক কড়াই বসালেন। তাতে প্রায় এক থেকে দেড় কাপ পরিমাণ পিঁয়াজ কলি তেলে ছাড়লেন। সাথে আদা-রসুন বাটা, লবণ, আস্ত কাঁচা মরিচ, হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, ধনে গুঁড়া, জিরা গুঁড়া দিয়ে মসলাগুলি খুব ভালোমত কসিয়ে নিলেন।



কসানো মসলায় মগজের টুকরাগুলি দিয়ে ভালোমত নেড়েচেড়ে আরও ৫ মিনিট নাড়লেন। কি অবাক! এতো সহজেই মগজ ভুনা হয়ে গেলো?? উপরে একটু ধনে পাতা কুঁচি ছিটিয়ে দিলেন। এত সহজে রান্না হলেও টেস্ট কিন্তু ছিল সেইরকম! আর ছোট্ট লামিসা তো খেয়ে মা'কে জড়িয়ে ধরলো; তোতলা তোতলা মুখে বলল, 'দিদা, তোমার রান্নাটা অনেক মজা হয়েছে'।

আজ এ পর্যন্তুই। আপনারা মতামত দিতে ভুলে যাবেন না যেন। আপনাদের মতমতই আমাদের টিকিয়ে রেখেছে।

Monday, 13 May 2013

মোগলদের নাম বলে কথা!!

১৩ মে ২০১৩

বৃষ্টির বিকেল। মনে হল যে কিছু মুখরোচক খাবার খাবো। যেদিন দু'চার ফোঁটা বৃষ্টি হয়, সেদিনই পিয়াজু বা পাকোড়া জাতীয় তেলে ভাজা কিছু খেতে ইচ্ছে হয়। আজ তো বেশ ঝুম বৃষ্টি; তাই ভাবলাম পিয়াজু-পাকোড়ার চাইতে একটু ভারী কিছু তেলে-ভাজা আইটেম হলে মন্দ হয় না। বেশীদূর খোঁজা লাগলো না। এমন একটা আইটেম আমাদের আশে-পাশে সবসময়ই ঘোরাফেরা করে। সেটা শুধু খেতেই কিছুটা ভারী নয়, তার নামটাও বেশ ভারিক্কি - মোগলাই পরোটা। মোগলদের নাম বলে কথা! ভারী না হয়ে যায় কোথা!



মোগলাই পরোটা বানানোর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এটার উপকরন কমবেশী সবসময়ই ঘরে থাকে। অনেকে আবার গোশতের কিমাও দিয়ে থাকেন... সিদ্দিকা কবিরের বইতেও দেখেছি যে তিনি গোশতের কিমা দিয়েই মোগলাই পরোটা বানিয়েছেন। আমার ঘরে তখন গোশত থাকলেও সেটা কিমা করা ছিল না। তাই গোশতের আমিষতোতো ভাই ডিম দিয়েই স্বাদের কাজটা চালিয়ে দিচ্ছি।



তবে সবার আগে ময়দার ডো (ময়ান)-টা বেশ আগেই করে রাখতে হয়। তাই ময়দার সাথে সামান্য লবণ, খাবার তেল, ও পানি দিয়ে ভালোভাবে মসৃণ ময়ান করে ফেলি। ময়ান হয়ে গেলে সেটা পুরোপুরি খাবার তেলে ডুবিয়ে রাখি। এখানে যেহেতু তেল একটু বেশীই ব্যবহার হচ্ছে, আর তেল বেশী খাওয়া খুব একটা স্বাস্থ্যসম্মত নয়, তাই আমরা রাইস-ব্র্যান তেল ব্যবহার করেছি। আমরা সাধারনতঃ বাসায় এই তেলই ব্যবহার করে থাকি, কারণ এতে কোলেস্টেরল কম থাকে।



ময়ানটা প্রায় আধা থেকে এক ঘন্টা তেলে ডুবিয়ে রাখলে ভাল। তাতে ময়ানটা অনেক নরম হয় এবং ভাজার পরে সেটা বেশ ভালোই মচমচে হয়। এবার এন্ট্রি বেলুনের। তেল থেকে ময়ানটা ভালোমতো তেল ঝরিয়ে তুলে নিই। যে তেলে ময়ানটা ডুবিয়ে রেখেছিলাম, সেই তেলটাই ভাজার জন্যে ব্যবহার করছি। ময়ানটাকে পিড়া বা অন্য কোন সমতলের উপরে রেখে যতটা বড় করা সম্ভব তা বেলে নিই।





ময়ানটা পুরোপুরি বেলা হয়ে গেলে তাতে কাঁচা মরিচ কুঁচি, ধনে পাতা কুঁচি আর পিঁয়াজ কুঁচি দিই। তার উপরে একটি ডিম ফেটিয়ে দিয়ে দিই। খেয়াল রেখেছি যে এই উপকরণগুলি যেন মাঝে থাকে; আশপাশে বেশ খানিকটা জায়গা খালি থাকে।





ময়ানের খালি অংশটুকু ছবির মতো ভাঁজ করে চারকোনা পরোটার মতো আকৃতি দিই। এর মধ্যেই চূলায় আমাদের তেল গরম হয়ে গেছে। পরোটাটি খুব সাবধানে তুলে তেলে দিই। খেয়াল রাখতে হবে যেন পরোটাটি পুরোপুরি ডুবো তেলে ভাজা হয়। একটা সাইড ভালোমতো ভাজা হয়ে গেলে অন্য সাইডটি ভালোমত ভাজার জন্যে উলটে দিই। ভাজার সময় খেয়াল রেখেছি আগুন যেন মাঝারি আঁচের হয়। তা না হলে ভেতরের অংশ ভালোমত রান্না হবার আগেই উপরের অংশ পুড়ে যাবে।




পাঁচ থেকে সাত মিনিটের মধ্যেই ভাজা শেষ হয়ে যাবে। তেল ঝরিয়ে তুলে সার্ভিং ডিসে নেবার পরে তা ৪টা বা ৯টা টুকরা করে নিতে পারেন। থামুন! স্বাদের আসল জিনিস এখনো বাকি আছে। এর উপরে অল্প কিছু বীট লবণ ছিটিয়ে দিন। আর একটু পিঁয়াজ কুঁচি আর পুদিনা পাতা কুঁচি ছড়িয়ে দিলে তো স্বাদে সোনায় সোহাগা।





আজ এ পর্যন্তই। কমেন্ট করতে ভুলে যাবেন না যেন। এটা আমাদের আনুপ্রেরণা যোগায়। আশা করি আমাদের সাথে থাকবেন। :)

Friday, 10 May 2013

মাছের রাজা যেখানে ইলিশ!!

১০ মে ২০১৩

হুম! মাছের রাজা যদি ইলিশ হয়, তবে ইলিশ ছাড়া আমাদের এই food blog কি করে হয় বলুন? রাজা ছাড়া রাজ্য চলতেই পারে না। আর তাই রাজাকে নিয়ে এবারের খাবারের রাজসভা! আপনারা হয়তো খেয়াল করে থাকবেন যে আমাদের পহেলা বৈশাখের পোস্টে আমরা লিখেছিলাম আমরা বাংলা বছরের প্রথম দিনটিতে কেন আমাদের মেনুতে ইলিশ রাখিনিগত দুই মাস (মার্চ-এপ্রিল ২০১৩) ইলিশ ধরা নিষেধ থাকলেও এখন অবশ্য ইলিশ ধরার সেই সমস্যাটা নেই। আমরা দেশের সম্পদের সঠিক মূল্যায়ন আশা করি সবার কাছ থেকে। আর তাই সেটা নিয়ে কথাও বলি। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করলে ইলিশ নিয়ে আমাদের যে ঐতিহ্য ছিল সেটা হয়তো ফিরে পাবো আবার। যাই হোক, আসল কথায় যাই।



রেসিপিটির নামের সাথে সবাই মোটামুটি পরিচিত - ইলিশ স্মোক। ইলিশ স্মোক রেসিপি একেকজনের একেক রকম হয়। আমার মায়ের (শরিফুন নাহার) করা ইলিশ স্মোকটি মোটামুটি আমার মা'রই রেসিপি। রেসিপিটির আদি প্রণালী জানতে চাইলে মা মুখে রহস্যময় হাসি দিয়ে বলেন, "এক দিনে এটা শিখিনি"। অনেকবারের চেষ্টায়, একেকটি উপকরণের কম বা বেশী প্রয়োগের মাধ্যমেই তাঁর রেসিপিটি পারফেকশন পেয়ে যায় কোন এক সময়। পারফেকশন কেন বলছি? আমাদের বাড়িতে এই রান্নাটি প্রায় প্রতিটি ঈদেই হয়েছে। গেস্টদের যে পরিমাণ প্রশংসা এই ইলিশের এইটেমটি কুড়িয়েছে, সেটা অন্য সব আইটেম যোগ করেও মনে হয় সমান হবে না।



মায়ের সাথে ঢুকলাম রান্নাঘরে। কানকো সহ নাড়িভুড়ি পরিষ্কার করা রূপালী ইলিশের গায়ে সোরা মাখিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে দিই। রান্নাটি করবো প্রেসার কুকারে। আগেই বলে রাখি, একেক জনের প্রেসার কুকার একেক রকম। মা যে প্রেসার কুকারে রান্না করবেন তা সিটি (হুইসেল)-এর উপরে নির্ভরশীল নয়, ঘড়ির কাঁটার উপরে নির্ভরশীল। সোরা মাখানো মাছগুলি এখন মা প্রেসার কুকারে রাখলেন। সাথে দিলেন ভিনেগার, ঘরে বানানো টমেটো সস (কেনা সসেও কোন সমস্যা নেই!), লবণ, আদা-রসুন বাঁটা, শুকনা মরিচ গুঁড়া, পিঁয়াজ কুঁচি ও রাইস-ব্র্যান তেল (অন্য যে কোন তেল আপনি ব্যবহার করতে পারেন)। তার সাথে এমনভাবে পানি দিলেন যেন মাছ দুটি পুরোটাই পানিতে ডুবে যায়। প্রেসার কুকার চূলায় দিলেন দেড় ঘন্টার জন্য। এখন অপেক্ষার পালা।



এক ঘন্টা পর এমন সুবাস ছড়ালো যে পেটকে ঠান্ডা রাখা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ালো! দেড় ঘন্টা পর প্রেসার কুকার খোলা হলে দেখা যায় যে মাছগুলি পুরোপুরি রান্না হয়ে গেছে, কিন্তু তারপরেও তার আস্ত রয়েছে। খুব সাবধানে আস্ত মাছগুলি সার্ভিং ডিসে রাখলেন মা। আর প্রেসার কুকারের নিচে থেকে যাওয়া গ্রেভিটাকে কড়া আঁচে কাঁচামরিচ সহ মাখামাখা করে নিয়ে ইলিশগুলির উপরে দিয়ে দিলেন। একদিকে অতি সুগন্ধ আর আরেকদিকে পেটের ছুঁচো বলছে জলদি ইলিশের উপরে হামলা কর! কিন্তু আজ তো ইলিশ স্মোকের ফটোসেসন! তাই জিহবায় লাগাম টেনে ইলিশকে সাজাতে বসলাম! ফটোসেসনের পর ইলিশদু'টি কত সময়ে শেষ হয়েছে, তা না হয় না-ই বললাম। আসলেই মাছের রাজা ইলিশ-ই!




চোখে দেখা যেহেতু খাবারের একটা বড় দিক, তাই আমরা খাবারের একটা সুন্দর স্টাইলিং-এর চেষ্টায় থাকি। আর যেহেতু আমরা ছবি তোলা আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য থাকে সবসময়, তাই এই স্টাইলিং-টাও একটু যত্ন না করে করলেই নয়। খাবার কিছুটা জুড়িয়ে যায় অবশ্য, তবে শেষ পর্যন্ত ছবিগুলা দেখে শান্তি লাগে। খাওয়ার পরে স্বাদটুকু শুধু স্মৃতিতে থেকে যায়। তার সাথে ছবিটা থাকলে মন্দ হয় না।



আপনাদের মতামত দিতে ভুলবেননা যেন। আপনাদের মতামত আমাদের অনুপ্রেরণা যোগায়।

Tuesday, 7 May 2013

চিকেন নিয়ে কি আর করা??... (সরিষা-পুদিনা চিকেন ফয়েল বারবিকিউ)

০৬ মে ২০১৩



চিকেন তো সবসময়ই রান্না হচ্ছে বাসায়। কিন্তু সবসময় কি আলাদা করে কিছু করা যায়? হয়তো যায়; হয়তো যায়না। আমরা তো আর রেসিপি এক্সপার্ট না, তাই আমাদের দৌড় খুব একটা বেশিদূর নয়। তবুও চেষ্টার ত্রুটি থাকে না। নতুন একটা স্বাদ কে না পেতে চায় বলুন? তবে এটা ঠিক যে কতটুকু নতুন কিছু করা হবে সেটা কিছুটা হলেও নির্ভর করবে কতটুকু কষ্ট করতে হবে সেটার উপরে। মাঝে মাঝে বেশী সময় লাগার কারণে, অথবা বেশী জটিল প্রসেস হবার কারণে নতুন কিছু করার বাসনা পেছনের সিটে জায়গা করে নেয়। যাইহোক, এই কষ্ট বা ঝামেলার চিন্তাটা থাকায় মাঝে মাঝে ভালো কিছু পাওয়া যায়। আর তেমনই কিছু একটা নিয়ে এবারের পোস্ট - সরিষা-পুদিনা চিকেন ফয়েল বারবিকিউ।




মুরগী বা চিকেন এমন একটা উপকরন যা রান্না করতে তেমন একটা সময় লাগে না, তবে ঘন্টাখানেক আগে মেরিনেট করে রাখলে মসলা ভালো ঢোকে। তাই চিকেনের টুকরাগুলিকে একটা আদা-রসুন বাঁটা, সরিষা বাঁটা, হলুদ-মরিচ-ধনে গুঁড়া, পেঁয়াজ কুঁচি, এলাচ-দারুচিনি গুঁড়া, লেবুর রস, পরিমানমত লবণ আর সরিষার তেল দিয়ে মাখিয়ে মেরিনেট করে রেখে দিই।







রান্না তো সবসময় চূলার উপরে হাঁড়িতে অথবা কয়লার উপরে সিকে করে থাকি। তাই ভাবলাম আজ অন্য কিছু চেষ্টা করে দেখি। সেই জন্য ফয়েল পেপারের উপর মুরগির টুকরাগুলি বিছাই। এখন মুরগির উপরে পুদিনা পাতা কুঁচি আর ফালি করা কাঁচা মরিচ দিই। উদ্দেশ্য সরিষার স্বাদের পাশাপাশি পুদিনার ফ্লেভারটা রাখতে পারি কিনা।



আজ যেহেতু রান্নাটা ফয়েল পেপারে মুড়িয়ে সরাসরি গ্যাসের চূলার উপরে করবো, তাই একসাথে বেশী মুরগির টুকরা নেব না। আকারভেদে সর্বোচ্চ চার/পাঁচ টুকরা মেরিনেট মুরগি ফয়েল পেপারে মুড়িয়ে নিই যাতে সহজে ফয়েল পেপারের প্যাকেটটি চূলার উপরে উল্টে-পাল্টে দিতে পারি। খেয়াল রেখেছি যাতে ফয়েল পেপারটি যেন ফুঁটা না থাকে; তাতে চূলার আগুন সরাসরি মুরগির গায়ে লাগলে মসলা ও মুরগি পুড়ে যেতে পারে।



১৫ মিনিটের মধ্যে চার-পাঁচবার প্যাকেটটি উলটে দিই। রান্না করা গোস্তের একটা হাল্কা ফ্লেভার আমার নাকে আসলেই বুঝতে পারি যে আমার রান্না সম্পন্ন হয়েছে। গরম ভাতের সাথে যখন চিকেনের প্রথম বাইটটি নিই, তখনি বুঝতে পারি যে এক্সপেরিমেন্ট সাকসেসফুল। মুরগিতে সরিষার ঝাঁঝও রয়েছে, আবার সাথে রয়েছে পুদিনার মোহনীয় ফ্লেভার। পুরোপুরি বারবিকিউ না হলেও সরিষা-পুদিনা চিকেন ফয়েল বারবিকিউ!





ছবি নিয়েই যেহেতু আমাদের প্রধান কাজ, তাই ছবি তোলার পেছনে কিছুটা হলেও সময় ব্যয় করা লাগে। তবে সবচেয়ে কষ্টকর হলো তৈরি খাবার সামনে রেখে ছবি তোলা। ক্ষিধের ব্যাপারটা তো আছেই, কিন্তু খাবারের ছবি তুলতে তুলতে ঠান্ডা হয়ে যাওয়াটা আসলেই পেইনফুল!

আপনাদের মতামত দিতে ভুলে যাবেন না যেন। আপনাদের মতামত আমাদের কাজ করে যাবার শক্তি যোগায়। আশা করি আপনারা আমাদের এই শক্তিটুকু সরবরাহ করবেন। ধন্যবাদ। আজকে এই পর্যন্তই।

আমাদের চিকেন নিয়ে লেখা অন্য পোস্টগুলিঃ
বাঁটা পিঁয়াজে চিকেন ভুনা
চিলি চিকেনের সাথে গাজর
পাস্তার সাথে চিকেন ব্রোস্ট আর ভেজিটেবল
স্টাফড চিকেন ব্রেস্ট, সাথে পনির ও পুদিনা
চিকেন সালাদ উইথ সামার ভেজি
চিলি-লাইম চিকেন
চিকেন স্ট্রিপ কাবাব
পেস্তো পাস্তার সাথে চিকেন বল

Thursday, 2 May 2013

কাঁচা হোক পাকা হোক, আমই রাজা!!

০২ মে ২০১৩

ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি যে ফলের রাজা নাকি আম। এখন নিজেই সবকিছু দেখছি, জানছি, বুঝছি - আসলেই ফলের রাজা আম। এমন একটা ফল যেটা কাঁচা অবস্থায় আমাদের মনোরঞ্জন শুরু করে একেবারে পেকে গিয়েও আমাদের মনে গেঁথে থাকে। আজকাল আমাদের বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোর বদৌলতে আমরা দেখি যে আমের তৃষ্ণা মেটাতে বোতলজাত আম সারাবছরই রয়েছে হাতের নাগালে। এতে সারাবছর তৃষ্ণা মিটবে ঠিকই, কিন্তু ষড়ঋতুর বাংলাদেশে টাটকা ফল বা শাকসব্জির স্বাদ কি বোতলের ফলে মেটানো সম্ভব? বিশেষ করে কাঁচা আমের কথা বললে কিন্তু ওই টাটকা সবুজ ফলটিই চোখের সামনে ভাসে।

আমের সাথে ছোটবেলার স্মৃতি কত যে জড়িয়ে আছে, তা বলে শেষ করা যাবে না। ঝড়ের দিনে গাছে ঢিল দিয়ে কাঁচা আম পাড়া; লবণ-মরিচ মাখিয়ে এক চোখ বন্ধ করে সেই আম চেটেপুটে শেষ করা; আমের আটি দিয়ে বাঁশি বানিয়ে বাজানো - এসব আজ শুধুই স্মৃতি। সেই স্মৃতির কিছুটা হলেও মনে পড়ে যায় আমের রাজ্যে বেড়াতে গেলে। আর আমের রাজ্য বলতে কিন্তু আমি চাপাই নবাবগঞ্জকেই বোঝাচ্ছি। সেখানে যদিও ঢিল দিয়ে আম পাড়ার কোন সংস্কৃতি নেই, তবে কচি কচি ছেলেমেয়েদের হাতের কাছে কচি কচি আমগুলি ঝুলতে দেখে মজাই লাগে। ওখানে আম একটা অর্থকরী ফসল, তাই সময় হবার আগে কেউ গাছ থেকে আম পাড়ে না। আর যদি কোন পর্যটক ভুলবশতঃ আম পেড়ে ফেলেন, তার জন্যে ছোটখাটো একটা জরিমানা অপেক্ষা করছে। ২০০৭ আর ২০০৮ সালে চাপাই গিয়ে দু'টা ব্লগ লিখেছিলাম। আরও অন্য সময়ও গিয়েছি; তবে ব্লগ লিখা হয়নি।



যাই হোক, আম নিয়ে কথা বলতে গেলে শেষ হবে না। আর এখনো গ্রীষ্মের অনেক বাকি আছে; সুতরাং আম নিয়ে আরও অনেক কিছু লিখবো আশা রাখি। আজ একটা ছোট্ট রেসিপি দিয়ে শেষ করবো। এমন কোন রেসিপি না যেটা পোস্ট করে রন্ধনশিল্পী বনে যেতে পারি। আমরা খাবারের ছবি তুলতে পছন্দ করি; পছন্দ করি খাবার নিয়ে লিখতে। তাই এই প্রয়াস।



যা গরম পরেছে, তাতে ঠান্ডা শরবতের কথা শুনলেই মন ভালো হয়ে যাবার কথা। আর সেটা যদি হয় কাঁচা আমের শরবত, তখন জিভে পানি আসলে দোষ দেওয়া যায় না। তাই ফ্রিজ খুলে দু'টা আম বের করে নিলাম। সুন্দর করে ছিলে সেগুলাকে প্রস্তুত করলাম শরবতের জন্য। আমের কুঁচিগুলি ব্লেন্ডারে দিয়ে সাথে যোগ করলাম জিরা গুঁড়া, বিট লবণ, চিনি, কাঁচা মরিচ কুঁচি, পুদিনা পাতা কুঁচি, আর লবণ।





যেহেতু কাঁচা আমে রস কম থাকে, তাই সামান্য কিছু পানি দিয়ে আগে উপকরনগুলি ব্লেন্ড করে নিই। আমাদের ক্ষুদে লামিসা সহ সাড়ে তিন জনের জন্য পানি যোগ করি। আবার ব্লেন্ড... চেখে মনে হল লবণটা একটু কম। সাধারণ লবণ নয়, বিট লবণটাই আরও একটু নিলাম। আবার ব্লেন্ড... পার্ফেকশন!




যেহেতু আমরা শরবতটাকে Smoothie করে না খেয়ে বরং Juice করে খাচ্ছি, তাই আঁশগুলি ছেঁকে নিলাম।




ব্যাস! হয়ে গেলো একটা ইয়ামি শরবত। এখন বরফ যোগে সার্ভ করলেই হলো।

আজ এই পর্যন্তই। গ্রীষ্মকালীন ফল-ফলাদি নিয়ে আরও অনেক লিখবো আশা রাখি। আপনাদের মতামত দিতে ভুলে যাবেন না যেন। আপনাদের মতামতই আমাদের এগিয়ে যেতে আনুপ্রেরণা দেয়।