Tuesday 16 April 2013

বৈশাখের আয়োজনে...

১৬ এপ্রিল ২০১৩

বাংলা বছরের প্রথম দিনে কি করবো ভাবছিলাম। এর মধ্যে এটাও ভেবেছিলাম যে এবার কিছুই করবো না। দেশের সার্বিক অবস্থা চিন্তা করে মনের শান্তি বেশ দূরে গিয়েই বসে ছিল। শেষে মনে করলাম, বছরের প্রথম দিনটাতেই যদি মুখ ভার করে বসে থাকি, তাহলে বছরের বাকি দিনগুলি থেকে ভালো কিছু তো আশাই করতে পারি না। আমরা নিজেরাই পারি নিজেদের শক্তি যোগাতে। তাই মা যখন বলছিলেন বাসায় ছোটখাটো একটা উৎসব করলে মন্দ হয় না, তখন রাজীই হয়ে গেলাম। জীবনটা অনেক ছোট। সবার সাথে মিলেমিশে বছরের প্রথম দিনটা উদযাপন করার সুযোগ হয়তো প্রতি বছর না-ও আসতে পারে।

সবাই একত্র হয়ে আনন্দ করার পেছনে রান্নাবান্না আর খাওয়া-দাওয়ার একটা বড় ভুমিকা থাকে। খাবার এমন একটা জিনিস, যেটা উৎসবের মেজাজটাকে আরও আনন্দঘন করে। খাবারের কথা আসতেই চিন্তা করতে শুরু করলাম কি কি থাকবে মেনুতে। বেশীরভাগ অনুষ্ঠানে মাছ-মাংস প্রধাণ আইটেম হলেও পহেলা বৈশাখের কথা আলাদা। তাই এবারে আমাদের টেবিলের হিরোই হবে কয়েক পদের ভর্তা। যদিও অনেকেই পহেলা বৈশাখের সাথে ইলিশের গভীর সম্পর্ক খুঁজে পাচ্ছেন, আমরা কিন্তু বাস্তবতাকেই বেশী গুরুত্ব দিয়েছি। এই সময়ে ইলিশ ধরা আইনত দন্ডতীয় হওয়ায় বিক্রেতারা তাদের স্টক করা ইলিশ মোটামুটি সোনার দামেই বিক্রি করেছেন। আমরা বরং ঋতুকে মেনে নিয়ে বাজারে যা পাওয়া যাচ্ছে সেটাকেই আমাদের মেনুর অন্তর্ভুক্ত করেছি।

টমেটোর ভর্তাটা দেখতে যেমন ছিল, খেতেও ছিল তেমন...


লাউশাক ভর্তাটার কদর ছিল সব অতিথিদের মুখে মুখে...


বেগুন-ডিমের ভর্তাটা সেদিনের সেরা ভর্তা খেতাবের জন্য বেশ এগিয়েই ছিল...


বিতর্ক ছাড়া না হলেও পটলের খোসার ভর্তাটা কিন্তু সেদিনের সেরা ভর্তা হতেই পারে...



ভর্তা এবারের হিরো হলেও ভর্তাগুলি কিন্তু ছিল খুবই সাধারণ, যা আমরা সবাই বাসায় কমবেশী ট্রাই করেছি। যেমন প্রথম ভর্তাটি ছিল পটলের খোসার ভর্তা। এই ভর্তাটা এতটাই স্পেশাল যে আমরা চিন্তা করছি একটা আলাদা ব্লগ পোস্ট লিখবো প্রস্তুতপ্রণালীর ছবি সহ। আরেকটি ভর্তা যা আমার মেহেমানদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছিল তা হলো বেগুন-ডিমের ভর্তা। অন্য দু'টি ভর্তা ছিল লাউশাকের ভর্তা আর টমেটো ভর্তা। এই দু'টি ভর্তার রেসিপিই পেয়ে যাবেন এখানে

ছোট্ট অতিথিদের জন্য করা হলেও লাউ-টমেটোর খাট্টাটা কিন্তু বড়রাও কম পছন্দ করেনি...




আমাদের বাড়িতে কিছু ক্ষুদে অতিথিও ছিল যারা এই চটকদার ভর্তাগুলির স্বাদ্গ্রহণে সক্ষম ছিল না। বলা বাহুল্য যে এই ক্ষুদে অতিথিদের বয়স ছিল দেড় থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে। তাই বলে স্বাদের সাথে তো সমঝোতা করা যায় না; সেজন্য এমন একটি প্রধান উপাদান বেছে নিলাম যে স্বাদে নিজেও কম যায় না; আর তা হলো লাউ। লাউয়ের সাথে যখন যুক্ত হয় টমেটো, তখন স্বাদ বাড়ে বই কমে না। হয়ে গেল লাউ-টমেটোর খাট্টা। স্বাদের সাথে যে সমঝোতা করবো না বলেছিলাম, তাই এখানে শুকনা মরিচের গুঁড়ার পরিবর্তে সবশেষে কাঁচা মরিচের সাহায্যে রেসিপিতে সুগন্ধ আর ঝালের একটা আভাস নিয়ে আসলাম।

 বৈশাখের প্রথম দিনটা অতটা গরম না হলেও ষড়ঋতু সালাদে কাসুন্দি সবার আন্তর ঠান্ডা করতে পেরেছিল...



আরও একটা আইটেম না বললেই নয়। তা হলো ষড়ঋতু সালাদে কাসুন্দি। এটা বৈশাখের জন্য আলাদা কোন আইটেম না হলেও কাসুন্দিটা ছিল সেই বৈশাখী আমেজটাকেই ধরে রাখার জন্য। এই সালাদের উপকরনগুলি এখন এতটাই হাতের নাগালে থাকে সবসময় যে, ব্লগটি পড়া শেষ করার প্রায় সাথে সাথেই ফ্রিজ খুলে আপনি এখনই এই সালাদটি তৈরি করে ফেলতে পারবেন। সালাদে শসা, টমেটো, গাজর, কাঁচা মরিচ, ধনে পাতা থাকবে না সেটা কি করে হয়? ড্রেসিং হিসাবে শুধু কাসুন্দি ঢেলে দিয়ে মাখিয়ে নিলেই হল।

আর অতিথিদের তো শুধু ভর্তা-সব্জি দিয়েই আপ্যায়ণ করা যায় না, তাই মেনুতে চিংড়ি ভুনা, মুরগী ভুনা ও মাছের কাবাব। তবে সবাই কিন্তু খাওয়া শেষে ওই হিরোদেরই (ভর্তা) পুরষ্কার দিয়েছেন। সেজন্য আজকের ব্লগে আর সেসব নিয়ে লিখবো না। আর হ্যাঁ, ইলিশ নিয়ে পরে কখনো লিখবো আশা করি যখন ইলিশের সিজন থাকবে। আপাতত বিদায়।

4 comments:

  1. আমার এক চাচা বলতেন "লবণ-মরিচে চড়তা, এর নাম ভর্তা"।
    মানে হল, ভর্তা হবে ঝাল-ঝাল, দেখেই খেতে ইচ্ছে করবে। এই ব্লগ এর সবগুলো ভর্তা-ই লোভনীয়।

    তবে একটা কথা আছে... এরা এই মুহূর্তে আমার কাছে ভিলেন... যতক্ষণ না খেতে পারছি ততক্ষণ ভিলেন... খাওয়ার সময় এরাই হবে হৃদয় হরণ করা হিরো । :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. হিরোকে হিরোর মর্যাদা আমরা কতটুকু দিতে পেরেছি জানি না, তবে আপনি যেভাবে কথাগুলি বলেছেন, তাতে আর কেউ না হোক হিরোরা কিন্তু সত্যিই আনন্দ পাবে... :)

      Delete
  2. বৈশাখ আসলো বলে... তাই এদিকটায় আমার আনাগোনা আবার শুরু... জানান দিতে কমেন্ট করে গেলাম :D

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমাদের পুরোনো পোস্টগুলি এখনো কাজে লাগছে জেনে খুব ভালো লাগলো।
      আর আপনার মত কেউ কেউ আমাদের পুরোনো পোস্টগুলিতে ভিজিট করে আমাদের আনুপ্রেরণা যুগিয়ে যাচ্ছেন। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে! :)

      Delete