১০ মে ২০১৩
হুম! মাছের রাজা যদি ইলিশ হয়, তবে ইলিশ ছাড়া আমাদের এই food blog কি করে হয় বলুন? রাজা ছাড়া রাজ্য চলতেই পারে না। আর তাই রাজাকে নিয়ে এবারের খাবারের রাজসভা! আপনারা হয়তো খেয়াল করে থাকবেন যে আমাদের পহেলা বৈশাখের পোস্টে আমরা লিখেছিলাম আমরা বাংলা বছরের প্রথম দিনটিতে কেন আমাদের মেনুতে ইলিশ রাখিনি। গত দুই মাস (মার্চ-এপ্রিল ২০১৩) ইলিশ ধরা নিষেধ থাকলেও এখন অবশ্য ইলিশ ধরার সেই সমস্যাটা নেই। আমরা দেশের সম্পদের সঠিক মূল্যায়ন আশা করি সবার কাছ থেকে। আর তাই সেটা নিয়ে কথাও বলি। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করলে ইলিশ নিয়ে আমাদের যে ঐতিহ্য ছিল সেটা হয়তো ফিরে পাবো আবার। যাই হোক, আসল কথায় যাই।
রেসিপিটির নামের সাথে সবাই মোটামুটি পরিচিত - ইলিশ স্মোক। ইলিশ স্মোক রেসিপি একেকজনের একেক রকম হয়। আমার মায়ের (শরিফুন নাহার) করা ইলিশ স্মোকটি মোটামুটি আমার মা'রই রেসিপি। রেসিপিটির আদি প্রণালী জানতে চাইলে মা মুখে রহস্যময় হাসি দিয়ে বলেন, "এক দিনে এটা শিখিনি"। অনেকবারের চেষ্টায়, একেকটি উপকরণের কম বা বেশী প্রয়োগের মাধ্যমেই তাঁর রেসিপিটি পারফেকশন পেয়ে যায় কোন এক সময়। পারফেকশন কেন বলছি? আমাদের বাড়িতে এই রান্নাটি প্রায় প্রতিটি ঈদেই হয়েছে। গেস্টদের যে পরিমাণ প্রশংসা এই ইলিশের এইটেমটি কুড়িয়েছে, সেটা অন্য সব আইটেম যোগ করেও মনে হয় সমান হবে না।
মায়ের সাথে ঢুকলাম রান্নাঘরে। কানকো সহ নাড়িভুড়ি পরিষ্কার করা রূপালী ইলিশের গায়ে সোরা মাখিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে দিই। রান্নাটি করবো প্রেসার কুকারে। আগেই বলে রাখি, একেক জনের প্রেসার কুকার একেক রকম। মা যে প্রেসার কুকারে রান্না করবেন তা সিটি (হুইসেল)-এর উপরে নির্ভরশীল নয়, ঘড়ির কাঁটার উপরে নির্ভরশীল। সোরা মাখানো মাছগুলি এখন মা প্রেসার কুকারে রাখলেন। সাথে দিলেন ভিনেগার, ঘরে বানানো টমেটো সস (কেনা সসেও কোন সমস্যা নেই!), লবণ, আদা-রসুন বাঁটা, শুকনা মরিচ গুঁড়া, পিঁয়াজ কুঁচি ও রাইস-ব্র্যান তেল (অন্য যে কোন তেল আপনি ব্যবহার করতে পারেন)। তার সাথে এমনভাবে পানি দিলেন যেন মাছ দুটি পুরোটাই পানিতে ডুবে যায়। প্রেসার কুকার চূলায় দিলেন দেড় ঘন্টার জন্য। এখন অপেক্ষার পালা।
এক ঘন্টা পর এমন সুবাস ছড়ালো যে পেটকে ঠান্ডা রাখা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ালো! দেড় ঘন্টা পর প্রেসার কুকার খোলা হলে দেখা যায় যে মাছগুলি পুরোপুরি রান্না হয়ে গেছে, কিন্তু তারপরেও তার আস্ত রয়েছে। খুব সাবধানে আস্ত মাছগুলি সার্ভিং ডিসে রাখলেন মা। আর প্রেসার কুকারের নিচে থেকে যাওয়া গ্রেভিটাকে কড়া আঁচে কাঁচামরিচ সহ মাখামাখা করে নিয়ে ইলিশগুলির উপরে দিয়ে দিলেন। একদিকে অতি সুগন্ধ আর আরেকদিকে পেটের ছুঁচো বলছে জলদি ইলিশের উপরে হামলা কর! কিন্তু আজ তো ইলিশ স্মোকের ফটোসেসন! তাই জিহবায় লাগাম টেনে ইলিশকে সাজাতে বসলাম! ফটোসেসনের পর ইলিশদু'টি কত সময়ে শেষ হয়েছে, তা না হয় না-ই বললাম। আসলেই মাছের রাজা ইলিশ-ই!
চোখে দেখা যেহেতু খাবারের একটা বড় দিক, তাই আমরা খাবারের একটা সুন্দর স্টাইলিং-এর চেষ্টায় থাকি। আর যেহেতু আমরা ছবি তোলা আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য থাকে সবসময়, তাই এই স্টাইলিং-টাও একটু যত্ন না করে করলেই নয়। খাবার কিছুটা জুড়িয়ে যায় অবশ্য, তবে শেষ পর্যন্ত ছবিগুলা দেখে শান্তি লাগে। খাওয়ার পরে স্বাদটুকু শুধু স্মৃতিতে থেকে যায়। তার সাথে ছবিটা থাকলে মন্দ হয় না।
আপনাদের মতামত দিতে ভুলবেননা যেন। আপনাদের মতামত আমাদের অনুপ্রেরণা যোগায়।
হুম! মাছের রাজা যদি ইলিশ হয়, তবে ইলিশ ছাড়া আমাদের এই food blog কি করে হয় বলুন? রাজা ছাড়া রাজ্য চলতেই পারে না। আর তাই রাজাকে নিয়ে এবারের খাবারের রাজসভা! আপনারা হয়তো খেয়াল করে থাকবেন যে আমাদের পহেলা বৈশাখের পোস্টে আমরা লিখেছিলাম আমরা বাংলা বছরের প্রথম দিনটিতে কেন আমাদের মেনুতে ইলিশ রাখিনি। গত দুই মাস (মার্চ-এপ্রিল ২০১৩) ইলিশ ধরা নিষেধ থাকলেও এখন অবশ্য ইলিশ ধরার সেই সমস্যাটা নেই। আমরা দেশের সম্পদের সঠিক মূল্যায়ন আশা করি সবার কাছ থেকে। আর তাই সেটা নিয়ে কথাও বলি। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করলে ইলিশ নিয়ে আমাদের যে ঐতিহ্য ছিল সেটা হয়তো ফিরে পাবো আবার। যাই হোক, আসল কথায় যাই।
রেসিপিটির নামের সাথে সবাই মোটামুটি পরিচিত - ইলিশ স্মোক। ইলিশ স্মোক রেসিপি একেকজনের একেক রকম হয়। আমার মায়ের (শরিফুন নাহার) করা ইলিশ স্মোকটি মোটামুটি আমার মা'রই রেসিপি। রেসিপিটির আদি প্রণালী জানতে চাইলে মা মুখে রহস্যময় হাসি দিয়ে বলেন, "এক দিনে এটা শিখিনি"। অনেকবারের চেষ্টায়, একেকটি উপকরণের কম বা বেশী প্রয়োগের মাধ্যমেই তাঁর রেসিপিটি পারফেকশন পেয়ে যায় কোন এক সময়। পারফেকশন কেন বলছি? আমাদের বাড়িতে এই রান্নাটি প্রায় প্রতিটি ঈদেই হয়েছে। গেস্টদের যে পরিমাণ প্রশংসা এই ইলিশের এইটেমটি কুড়িয়েছে, সেটা অন্য সব আইটেম যোগ করেও মনে হয় সমান হবে না।
মায়ের সাথে ঢুকলাম রান্নাঘরে। কানকো সহ নাড়িভুড়ি পরিষ্কার করা রূপালী ইলিশের গায়ে সোরা মাখিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে দিই। রান্নাটি করবো প্রেসার কুকারে। আগেই বলে রাখি, একেক জনের প্রেসার কুকার একেক রকম। মা যে প্রেসার কুকারে রান্না করবেন তা সিটি (হুইসেল)-এর উপরে নির্ভরশীল নয়, ঘড়ির কাঁটার উপরে নির্ভরশীল। সোরা মাখানো মাছগুলি এখন মা প্রেসার কুকারে রাখলেন। সাথে দিলেন ভিনেগার, ঘরে বানানো টমেটো সস (কেনা সসেও কোন সমস্যা নেই!), লবণ, আদা-রসুন বাঁটা, শুকনা মরিচ গুঁড়া, পিঁয়াজ কুঁচি ও রাইস-ব্র্যান তেল (অন্য যে কোন তেল আপনি ব্যবহার করতে পারেন)। তার সাথে এমনভাবে পানি দিলেন যেন মাছ দুটি পুরোটাই পানিতে ডুবে যায়। প্রেসার কুকার চূলায় দিলেন দেড় ঘন্টার জন্য। এখন অপেক্ষার পালা।
এক ঘন্টা পর এমন সুবাস ছড়ালো যে পেটকে ঠান্ডা রাখা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ালো! দেড় ঘন্টা পর প্রেসার কুকার খোলা হলে দেখা যায় যে মাছগুলি পুরোপুরি রান্না হয়ে গেছে, কিন্তু তারপরেও তার আস্ত রয়েছে। খুব সাবধানে আস্ত মাছগুলি সার্ভিং ডিসে রাখলেন মা। আর প্রেসার কুকারের নিচে থেকে যাওয়া গ্রেভিটাকে কড়া আঁচে কাঁচামরিচ সহ মাখামাখা করে নিয়ে ইলিশগুলির উপরে দিয়ে দিলেন। একদিকে অতি সুগন্ধ আর আরেকদিকে পেটের ছুঁচো বলছে জলদি ইলিশের উপরে হামলা কর! কিন্তু আজ তো ইলিশ স্মোকের ফটোসেসন! তাই জিহবায় লাগাম টেনে ইলিশকে সাজাতে বসলাম! ফটোসেসনের পর ইলিশদু'টি কত সময়ে শেষ হয়েছে, তা না হয় না-ই বললাম। আসলেই মাছের রাজা ইলিশ-ই!
চোখে দেখা যেহেতু খাবারের একটা বড় দিক, তাই আমরা খাবারের একটা সুন্দর স্টাইলিং-এর চেষ্টায় থাকি। আর যেহেতু আমরা ছবি তোলা আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য থাকে সবসময়, তাই এই স্টাইলিং-টাও একটু যত্ন না করে করলেই নয়। খাবার কিছুটা জুড়িয়ে যায় অবশ্য, তবে শেষ পর্যন্ত ছবিগুলা দেখে শান্তি লাগে। খাওয়ার পরে স্বাদটুকু শুধু স্মৃতিতে থেকে যায়। তার সাথে ছবিটা থাকলে মন্দ হয় না।
আপনাদের মতামত দিতে ভুলবেননা যেন। আপনাদের মতামত আমাদের অনুপ্রেরণা যোগায়।
আমি এই রেসিপি অনেকদিন ধরেই খুঁজছি... এইবার পেয়ে গেলাম... মনে হয়না একবারেই ঠিকঠাক রাঁধতে পারবো... তবে চেষ্টা যে করবো তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না...
ReplyDeleteআপনারা যে এত এত রেসিপি শেয়ার করেন, সাথে সুন্দর করে ডেকোরেট করা ছবি ও থাকে... আপনাদের এই আয়োজন যে আমাদের কতটা হেল্প করে তা বলে বোঝানো যাবেনা...
শুধু রান্না করে বাটি তে ঢেলে দিয়ে দিলেই যে হল না... পরিবেশনের ও যে একটা আলাদা স্বাদ আছে তা কিন্তু আপনাদের ছবি দেখলেই টের পাওয়া যায়...
শুধু রেসিপি-ই নয়... সাথে সাথে কত সুন্দর করে ডেকোরেট করা যায় সেই বুদ্ধি ও পেয়ে যাই এখানে...
আপনাদের এই আয়োজনের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ :)
অসংখ্য ধন্যবাদ এই সুন্দর কথাগুলা বলার জন্যে। আপনার ভালো লাগে শুনে আমাদের খুব আনন্দ হচ্ছে, তবে আমরা যতটা আশা করি ততটা ফীডব্যাক কখনোই পাই না। সবাই দেখে চলে যান সন্তর্পণে, ফীডব্যাক দেবার সময় কোথায়? :O
Deleteযাই হোক, এই রেসিপিটা তেমন একটা সহজ বলে বলা যাবে না। কারণ রান্না হবার সময় আপনি কিন্তু দেখতে পাচ্ছেন না প্রেসার কুকারের ভেতরে কি অবস্থা। একবার খুলে দেখে আবার বন্ধও করা যাচ্ছে না। শুধুমাত্র একেবারে রান্না শেষেই আপনি বুঝতে পারছেন হয়েছে কিনা।
আমরা যেহেতু food photographer, তাই সবসময় ছবির প্রতি আমাদের বেশী আকর্ষণ থাকে। আমরা অনেক সময় দিই ছবি তোলার পেছনে। পার্ফেকশন না আসা পর্যন্ত খাবার গলা পর্যন্ত যায় না। :)
সোরা কি ?? দেড় ঘণ্টায় কয়টা সিটি দিবে ??
ReplyDeleteসোরার কেমিক্যাল নামটি হচ্ছে পটাসিয়াম নাইট্রেট; তবে এটাকে সল্ট পিটারও বলে। রান্নার মসলার দোকানে এটা পাবেন। এটা ব্যবহার করা হয় খাবার তারাতারি নরম করার জন্য।
Deleteআর দেড় ঘন্টায় ক'টা সিটি দেবে সেটা বলতে পারছিনা। কারন আমার মা সিটি দেওয়া প্রেসার কুকারে কখনো রান্না করেননি। আর আমরাও সিটি দেওয়া প্রেসার কুকার ছারা রান্না করতে পারি না। মা এই পদ্ধতি রপ্ত করেছেন বহুদিনের অভিজ্ঞতায়। আমরাও আবিষ্কারের চেষ্টায় আছি যে ক'টা সিটিতে কাজ হতে পারে। জানতে পারলে অবশ্যই লিখবো।