Sunday 7 July 2013

ভর্তার আসক্তি...... (ঝিঙ্গা ভর্তা)

০৭ জুলাই ২০১৩



বাঙ্গালী হয়ে ভর্তার প্রতি একটা আকর্ষণ মনে হয় জন্মের পরে বেশ তাড়াতাড়িই হয়ে যায়। আজকের নতুন জেনারেশনের কথা হয়তো বলতে পারবো না; তবে আমাদের জেনারেশনের কথা বলতে পারি - ভর্তা আর গরম ভাত হলে খাবারের টেবিল ছেড়ে উঠা কঠিন হয়ে যায়। আমাদের এই অদ্ভুত 'আসক্তি' আমরা পেয়েছি আমাদের আগের জেনারেশন থেকে। তারাও সেটা বংশ পরম্পরায় পেয়েছিলেন। আর এই আসক্তি না হয়েই উপায় কি বলুন? যারা একবার ভর্তার প্রকৃত স্বাদ পেয়েছেন, তাঁরা সারাজীবনের জন্য শেষ! অন্য কিছুতেই তারা সেই স্বাদটি পাবেন না!

আর ভর্তা সম্ভবত পৃথিবীর সবচাইতে ন্যাচারাল খাবারগুলির অন্যতম। একটা ফুটবল সামনে পেলে একটা শিশু যেমন স্বভাবসুলভ-ভাবে সেটাতে লাথি বসাতে চাইবে, ঠিক তেমনি, একটা খাবার সামনে পেলে আর কিছু না হোক ভর্তা করে খাওয়ার একটা আইডিয়া আসবেই! পেটে গিয়ে কোন খাবারের আকৃতিই তো ঠিক থাকবে না, তাই না? পেটেই যখন ভর্তা হবে, তখন......... যাই হোক ভর্তা নিয়ে অনেক প্যাঁচাল হয়ে গেল। আজকে আমরা ভর্তার জন্যে বেছে নিয়েছি ঝিঙ্গা-কে; যেটাকে ইংরেজীতে বলে Ridged Luffa বা Ridged Gourd । এতে ফ্যাট এবং কোলেস্টেরল খুব কম থাকে; আর প্রচুর পরিমাণে থাকে ডায়েটারি ফাইবার, ভিটামিন 'সি', riboflavin, zinc, thiamin, iron, magnesium এবং manganese। এতে রয়েছে insulin-like peptides, alkaloids এবং charantin, যা রক্ত এবং ইউরিনে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।



যাই হোক, আজকের রেসিপিতে আসি। আমরা যেহেতু রেসিপির ব্যাপারে তেমন এক্সপার্ট নই, তাই মাঝে মধ্যেই আমরা রেসিপি ধার করি। আর এই ধার করার প্রসেসে আজকে ধন্যবাদ দেবার পালা সালমা সুলতানা তাজিয়া-কে। তার এই অত্যন্ত মজাদার রেসিপিটাই আজকে আমরা ছবি ও কথার মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টায় আছি। আমরা তো এই খাবারে সেইরকম আসক্তি জন্মে ফেলেছি। আশা করি আপনাদেরও ভালো লাগবে। আর কথা না বাড়িয়ে রান্নাঘরে ঢুকে যাই।

 


 এখানে ১ কেজি ঝিঙ্গা নিয়েছিলাম। দেখতে ১ কেজি হলেও ভর্তা বানানোর পর তা ২৫০ গ্রামও হয়েছিল কিনা সন্দেহ! তবে ঝিঙ্গা সিলেকশনের ব্যাপারে খেয়াল রেখেছিলাম ঝিঙ্গাগুলা যেন তিতা না হয়। প্রথমে ঝিঙ্গাগুলিকে ছিলে নিয়ে বড় বড় টুকরা করে নিয়েছি। সামান্য একটু লবণ ও পানি দিয়ে ঝিঙ্গাগুলি খুব ভালোমত সিদ্ধ করে নিয়েছি।




 লবণ পড়লে এমনিতেই ঝিঙ্গা প্রচুর পানি ছাড়ে। পুরো পানি শুকিয়ে যাবার পরে তাতে দু'টুকরা রসুন, অর্ধেকটা পিঁয়াজ (মিডিয়াম আকারের) ও দু'টা শুকনা মরিচ (ঝালটা স্বাদ বুঝে) যোগ করেছি।




সমস্ত উপকরণগুলিই একসাথে শিলপাটায় বেঁটে নিয়েছি। আপনি অবশ্য ফুড প্রসেসরও ব্যবহার করতে পারেন।





বাটা এই মিশ্রণটি ননস্টিক প্যানে সামান্য তেল দিয়ে খুব ভালোমত ভুনে নিয়েছি। লবণ চেখে লাগলে এরেকটু দিয়ে নিতে পারেন। আমাদের অবশ্য দেবার দরকার পড়েনি। ননস্টিক প্যানে মিশ্রণটি তেল ছেড়ে আসলে বুঝতে হবে ভর্তা হয়ে গেছে। এখন শুধু পরিবেশনের অপেক্ষা।


আজ এখানেই বিদায় নিচ্ছি। আপনাদের ফীডব্যাক দিকে ভুলে যাবেন না যেন! আপনাদের আনুপ্রেরণার কারণেই আমরা এখনো ছবি তুলে আর লিখে যাচ্ছি। আশা করি আরও বেশি বেশি অনুপ্রেরণা যোগাবেন আমাদের জন্য।

ভর্তা নিয়ে আমাদের অন্য পোস্টগুলিও দেখতে পারেনঃ
বেগুন ভর্তা, টমেটো ভর্তা, লাউশাক ভর্তা, ছিম ভর্তা, ডাটাশাক ভর্তা

4 comments:

  1. দেখেই তো খেতে ইচ্ছে করছে... :)

    একটা কথা বলি... আপনাদের যে সহজ ভাষায় লেখা ভর্তা সহ অন্যান্য পোস্টগুলো... এগুলো আমার অন্তত খুব কাজে লাগবে বিদেশের মাটিতে... মন চাইলেই একটু দেখে নিয়ে করা যাবে দেশীয় খাবারগুলো... অগ্রীম ধন্যবাদ আপনাদের... :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. একটা কমেন্ট দেখে সবসময়ই ভালো লাগে, কিন্তু যখন আপনার কাছ থেকে একটা ইন্টেলিজেন্ট কমেন্ট আসে, সেটার আনন্দ থাকে সম্পূর্ণ আলাদা। রেসিপির জন্যে ধন্যবাদের কেক তো আপনার প্রাপ্যই, আর এই কমেন্টের জন্যে সেই কেকের উপরে একটা সুন্দর টপিংও :D

      Delete
  2. ইয়াল্লাহ্ কী সুন্দর দেখতে এই ভর্তা ! জীবনেও খাইনি। এখন অপেক্ষা করছি কখন সন্ধ্যা হবে, আজ ডিনারে এই ভর্তা করবই করব :)
    Thanks a million for such an adorable recipe :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. আসলেই, এই ভর্তাটা এত্ত মজার যে না খেলে একটা বড় মিস হয়ে যায়। রেসিপির জন্য ধন্যবাদ পাবেন উপরে আপনার আগে যিনি কমেন্ট করেছেন তিনি। আসংখ্য ধন্যবাদ কমেন্টের জন্য! :)

      Delete