১৭ জুলাই ২০১৩
অনেক গ্রীষ্মকালীন শাকসব্জির মধ্যে কিছু সব্জির নাম অনেকেই ভুলে যাই অথবা লিস্টের মধ্যে নিচের দিকে স্থান পায়। তেমনি সব্জির মধ্যে কাকরোল (Teasel Gourd / Spiny Gourd) অন্যতম। কাঁচা বাজারে গেলে দেখা যায় যে পটল, পেঁপে, কুমড়া, বেগুন, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, শসা, করল্লা, ইত্যাদি সব্জির সাগরে ছোট্ট কাকরোলগুলি যেন ক্ষুদে নৌকা হয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে। কাকরোল মোটামুটি জনপ্রিয় সব্জির মধ্যে পড়লেও কাকরোলের যায়গাটা বেশীরভাগ সময় চলে যায় করল্লার কাছে। কিছুটা তেঁতো বা bitter টেস্টের জন্য বেশীরভাগ মানুষ করল্লাকেই বেছে নেয়। আলাদা কোন টেস্টের না হওয়ায় কাকরোলের স্থান হয় কিছুটা পেছনে। Momordica dioica বৈজ্ঞানিক নামের এই সবজি ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরে তেমন একটা হয় না। তবে এটা পুষ্টিগুণের দিক থেকে বেশ চমতকার একটা ফসল। এতে ভিটামিন-সি ও পটাসিয়াম প্রচুর পরিমাণে রয়েছে; তাছাড়াও রয়েছে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, ফসফরাস, ক্যারোটিন। তবে পুষ্টিগুণের কথা চিন্তা করলে কাকরোলের কদর তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম বলেই আপাত দৃষ্টিতে মনে হয়। অনেক সব্জির মতো রেসিপির বৈচিত্রতা হয়তো কাকরোলের ক্ষেত্রে কিছুটা কম চোখে পড়ে। আমাদের হয়তো ভুল হতে পারে; তবে আমাদের চোখে অন্তত তা-ই মনে হয়েছে। কাকরোলের ভাজি বেশ মজার। তবে আপনাদের কথা জানি না, আমাদের এই ভাজির বাইরে নতুন কিছু খুঁজে পেতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে।
যাই হোক আমরা সেই রেসিপির বৈচিত্র আনার লক্ষ্যে আজকের এই মাদার'স রেসিপি দিচ্ছি। মা (নিলুফা কামাল) বিপদে ছিলেন কাকরোল থেকে কি করে আলাদা কিছু তৈরি করবেন। কাকরোলের নিজস্ব স্বাদ বা ফ্লেভার তেমন একটা নেই। তবে এতে রয়েছে প্রচুর ফাইবার। তাই এর সাথে স্বাদবর্ধক কোন কিছু যোগ করেই এতে বৈচিত্র আনা সম্ভব। মা ঠিক সেটাই করেছিলেন। আজ সেই কাকরোলের খাট্টা (Teasel Gourd in Tamarind Sauce) নিয়েই লিখছি।
কাকরোলের কলঙ্ক বলে কিছু থাকলে তা হচ্ছে এর বিচি। বিচি সহ এটা খাওয়া দুষ্কর। একারণেই প্রথমে মা'র মত করেই কাকরোলগুলি টুকরা করে বিচি ছাড়িয়ে নিলাম। এরপরে সামান্য হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া ও সামান্য লবণ দিয়ে ৫-১০ মিনিটের জন্যে মেরিনেট করে রাখলাম। এই সময়ের মধ্যে এক টেবিল চামচ পরিমাণ তেঁতুল হাফ কাপ পানিতে ভিজিয়ে রাখি, যা পরবর্তীতে খাট্টা বানাবার সময় এই রান্নায় ব্যবহার করবো।
মিনিট দশেক পর তাওয়ায় সামান্য খাবার তেলে (আমরা রাইস ব্র্যান অয়েল ব্যবহার করেছি; আপনি যেকোন তেল ব্যবহার করতে পারেন) কাকরোলের টুকরাগুলি হাল্কা শ্যালো ফ্রাই করে নিলাম। এতে কাকরোলগুলি গ্রেভিতে বেশি সময় রাখা লাগবে না।
কাকরোলগুলি ভা্জা হয়ে গেলে গ্রেভি তৈরি শুরু করি। প্রথমে কড়াইয়ে খাবার তেল নিয়ে তাতে প্রায় দুই টেবিল চামচ পরিমান পিঁয়াজ কুঁচি দিই। পিঁয়াজ কুঁচি হালকা বাদামী হয়ে আসলে তাতে সামান্য লবণ, হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, ধনিয়া গুঁড়া ও আদা-রসুন বাঁটা দিই। মসলা লেগে আসলে তাতে পানি দিতে হবে। গ্রেভি যে পরিমাণ করবো, সেই পরিমাণ অনুযায়ী পানি দিই।
কষানো মসলার উপরে আগে হালকা ভেজে রাখা কাকরোলের টুকরাগুলি সুন্দর করে বিছিয়ে দিই; ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিই এবং চূলার আঁচটি মাঝারি রাখি। ৪-৫ মিনিট পরে ঢাকনা উঠালে দেখতে পাই কাকরোলগুলি পুরোপুরি রান্না হয়ে গিয়েছে।
এখন গুলানো তেঁতুল এই কাকরোলের গ্রেভির উপরে দিয়ে দিই। এরপরে এর উপরে সামান্য চিনি ছিটিয়ে দিই, যাতে তেঁতুলের টকটা কিছুটা ব্যালান্স হয়। আর নামানোর পূর্বে টেলে রাখা জিরা গুঁড়া ছিটিয়ে দিলাম। ব্যাস, তৈরি হয়ে গেল কাকরোলের খাট্টা।
সার্ভ করার সময় আমাদের বাগান থেকে আনা কিছু কারি পাতা (Curry Leaves) এর উপরে দিয়ে দিয়েছিলাম ফ্লেভারের জন্য। কারি পাতা না থাকলে আপনি ধনে পাতাও দিতে পারেন। গরম ভাতের সাথে খেলে বেশ মজা পাবেন।
পরবর্তী পোস্টের আগ পর্যন্ত বিদায় নিচ্ছি। ফীডব্যাক দিতে ভুলে যাবেন না যেন। আপনাদের মতামত আমাদের চালিকাশক্তি। আপনি মতামত না দিলে কে দেবে বলুন?
অনেক গ্রীষ্মকালীন শাকসব্জির মধ্যে কিছু সব্জির নাম অনেকেই ভুলে যাই অথবা লিস্টের মধ্যে নিচের দিকে স্থান পায়। তেমনি সব্জির মধ্যে কাকরোল (Teasel Gourd / Spiny Gourd) অন্যতম। কাঁচা বাজারে গেলে দেখা যায় যে পটল, পেঁপে, কুমড়া, বেগুন, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, শসা, করল্লা, ইত্যাদি সব্জির সাগরে ছোট্ট কাকরোলগুলি যেন ক্ষুদে নৌকা হয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে। কাকরোল মোটামুটি জনপ্রিয় সব্জির মধ্যে পড়লেও কাকরোলের যায়গাটা বেশীরভাগ সময় চলে যায় করল্লার কাছে। কিছুটা তেঁতো বা bitter টেস্টের জন্য বেশীরভাগ মানুষ করল্লাকেই বেছে নেয়। আলাদা কোন টেস্টের না হওয়ায় কাকরোলের স্থান হয় কিছুটা পেছনে। Momordica dioica বৈজ্ঞানিক নামের এই সবজি ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরে তেমন একটা হয় না। তবে এটা পুষ্টিগুণের দিক থেকে বেশ চমতকার একটা ফসল। এতে ভিটামিন-সি ও পটাসিয়াম প্রচুর পরিমাণে রয়েছে; তাছাড়াও রয়েছে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, ফসফরাস, ক্যারোটিন। তবে পুষ্টিগুণের কথা চিন্তা করলে কাকরোলের কদর তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম বলেই আপাত দৃষ্টিতে মনে হয়। অনেক সব্জির মতো রেসিপির বৈচিত্রতা হয়তো কাকরোলের ক্ষেত্রে কিছুটা কম চোখে পড়ে। আমাদের হয়তো ভুল হতে পারে; তবে আমাদের চোখে অন্তত তা-ই মনে হয়েছে। কাকরোলের ভাজি বেশ মজার। তবে আপনাদের কথা জানি না, আমাদের এই ভাজির বাইরে নতুন কিছু খুঁজে পেতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে।
যাই হোক আমরা সেই রেসিপির বৈচিত্র আনার লক্ষ্যে আজকের এই মাদার'স রেসিপি দিচ্ছি। মা (নিলুফা কামাল) বিপদে ছিলেন কাকরোল থেকে কি করে আলাদা কিছু তৈরি করবেন। কাকরোলের নিজস্ব স্বাদ বা ফ্লেভার তেমন একটা নেই। তবে এতে রয়েছে প্রচুর ফাইবার। তাই এর সাথে স্বাদবর্ধক কোন কিছু যোগ করেই এতে বৈচিত্র আনা সম্ভব। মা ঠিক সেটাই করেছিলেন। আজ সেই কাকরোলের খাট্টা (Teasel Gourd in Tamarind Sauce) নিয়েই লিখছি।
কাকরোলের কলঙ্ক বলে কিছু থাকলে তা হচ্ছে এর বিচি। বিচি সহ এটা খাওয়া দুষ্কর। একারণেই প্রথমে মা'র মত করেই কাকরোলগুলি টুকরা করে বিচি ছাড়িয়ে নিলাম। এরপরে সামান্য হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া ও সামান্য লবণ দিয়ে ৫-১০ মিনিটের জন্যে মেরিনেট করে রাখলাম। এই সময়ের মধ্যে এক টেবিল চামচ পরিমাণ তেঁতুল হাফ কাপ পানিতে ভিজিয়ে রাখি, যা পরবর্তীতে খাট্টা বানাবার সময় এই রান্নায় ব্যবহার করবো।
মিনিট দশেক পর তাওয়ায় সামান্য খাবার তেলে (আমরা রাইস ব্র্যান অয়েল ব্যবহার করেছি; আপনি যেকোন তেল ব্যবহার করতে পারেন) কাকরোলের টুকরাগুলি হাল্কা শ্যালো ফ্রাই করে নিলাম। এতে কাকরোলগুলি গ্রেভিতে বেশি সময় রাখা লাগবে না।
কাকরোলগুলি ভা্জা হয়ে গেলে গ্রেভি তৈরি শুরু করি। প্রথমে কড়াইয়ে খাবার তেল নিয়ে তাতে প্রায় দুই টেবিল চামচ পরিমান পিঁয়াজ কুঁচি দিই। পিঁয়াজ কুঁচি হালকা বাদামী হয়ে আসলে তাতে সামান্য লবণ, হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, ধনিয়া গুঁড়া ও আদা-রসুন বাঁটা দিই। মসলা লেগে আসলে তাতে পানি দিতে হবে। গ্রেভি যে পরিমাণ করবো, সেই পরিমাণ অনুযায়ী পানি দিই।
এখন গুলানো তেঁতুল এই কাকরোলের গ্রেভির উপরে দিয়ে দিই। এরপরে এর উপরে সামান্য চিনি ছিটিয়ে দিই, যাতে তেঁতুলের টকটা কিছুটা ব্যালান্স হয়। আর নামানোর পূর্বে টেলে রাখা জিরা গুঁড়া ছিটিয়ে দিলাম। ব্যাস, তৈরি হয়ে গেল কাকরোলের খাট্টা।
সার্ভ করার সময় আমাদের বাগান থেকে আনা কিছু কারি পাতা (Curry Leaves) এর উপরে দিয়ে দিয়েছিলাম ফ্লেভারের জন্য। কারি পাতা না থাকলে আপনি ধনে পাতাও দিতে পারেন। গরম ভাতের সাথে খেলে বেশ মজা পাবেন।
পরবর্তী পোস্টের আগ পর্যন্ত বিদায় নিচ্ছি। ফীডব্যাক দিতে ভুলে যাবেন না যেন। আপনাদের মতামত আমাদের চালিকাশক্তি। আপনি মতামত না দিলে কে দেবে বলুন?
দেখে মন ভরে গেল। আমি কাঁকরোলের ভক্ত তবে আমার পরিবারে আর কেহ এটা দেখতে পারে না। আমি মাঝে মাঝে কাঁকরোলের ভাজি খাই।
ReplyDeleteআপনাদের এই রান্নাটা নোটে তুলে নিলাম। সামনে সুযোগ পেলে খেয়ে দেখে নিব। মজাদার হবেই।
শুভেচ্ছা।
অসংখ্য ধন্যবাদ, উদরাজী ভাই!
Deleteএই খাবারটা আলরেডি আমার ফেভারেটের লিস্টে পড়ে গেছে। কাকরোল আসলেই অনেকের কাছেই অপছন্দের। তবে এই রেসিপি একবার ট্রাই করলে আশা করি অপছন্দের থাকবে না।
ওহ, আশা করি কমেন্টের সমস্যাটা দূর হয়েছে। :)
Kakrol vorta--my fav--yummy... :-)
ReplyDeleteR evabey kakrol vejey niye amra chingri diye ranna kori..dat is also yummy... :-)
অসংখ্য ধন্যবাদ কমেন্টের জন্য!
Deleteভর্তা আর ভাজা কাকরোল বেশ মজার। আমরা ওটাই জানতাম এতকাল; আর কিছু করা যায় কিনা জানতাম না। তবে মা'র কাছে থেকে এই খাট্টার রেসিপি পাবার পরে সত্যিই ধারণা পালটে গেছে। আপনিও এটা ট্রাই করে দেখতে পাবেন; মজা পাবেন সত্যি! :)
Shetai to bollam.eivabey vejey niye jhol e diye amrao khai.bt tatey chingri o dei. :-)
ReplyDeleteR kakrol vorta ta amra ekvabey khai.kakrol,dim r alu eksathey vorta kori.apnarao ki evabei koren?
বাহ, ভালো একটা আলাদা রেসিপি দিয়েছেন! তেঁতুলের সাথে চিংড়ি অবশ্য এর আগে খাওয়া হয়নি, তবে ঝোলে খাওয়া হতো রেগুলার। আমিষের সাথেও তরিকারি করে খাওয়া হতো। তবে তেঁতুলের সাথে রেসিপিটা মা'র কাছ থেকে শিখলাম। আর কাকরোলের ভর্তাটা অবশ্য আমাদের বাড়িতে প্রচলন নেই। তবে আপনার আছে শুনে মনে হচ্ছে বেশ মজাই হবে! ট্রাই করে দেখতে হবে! আবারো ধন্যবাদ! :)
Delete