Tuesday 9 July 2013

সে যতোই কালো হোক...... ( কালিজিরা ভর্তা )

০৯ জুন ২০১৩



কালিজিরা বা কালোজিরা-কে মানুষ উপকারী খাদ্য বা পথ্য হিসেবে দেখে এসেছে বহুকাল ধরে। ইংরেজী নামে কিছুটা ঝামেলা আছে বলেই এর বৈজ্ঞানিক নামে ডাকাটাই বেশী যুক্তিযুক্ত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Nigella sativa । আর এই নামেই অনেক সময় বোতলের গায়ে লিখে এটা বিভিন্ন দেশে বিক্রি করা হয়। যদিও বেশীরভাগ মানুষ এটাকে
Black Cumin বলেই জানে, এটা পুরোপুরি ঠিক হয় না যদি এই নামে ডাকা হয়। কারণ Black Cumin নামে সম্পূর্ণ অন্য একটি গাছ বা সেটার বীজও পরিচিত, যার বৈজ্ঞানিক নাম Bunium persicum । এটা নিয়ে কিছুটা ডিবেটও রয়েছে। তবে আজকাল Bunium persicum পাওয়া নাকি বেশ কঠিন হয়ে গেছে। তাই সেটার বদলে Nigella sativa-কেই মানুষ কালিজিরা ডাকতে শিখে গেছে। তাই কালিজিরা মানেই এখন Black Cumin । ইসস... কি সব বৈজ্ঞানিক নামের প্যাচাল শুরু করলাম! আসলে আমরা কি খাচ্ছি, সেটা যদি মোটামুটি জানা থাকে, সেটা সবসময়ই ভালো। খেলাম একটা আর গুণাগুণ জানলাম আরেকটির, সেটা তো ঠিক না। আর যেকোন জীবের কথাই বলি না কেন, প্রচলিত নাম কয়েক'শ থাকুক তাতে সমস্যা নেই; বৈজ্ঞানিক নাম কিন্তু একটাই। এটা একেবারে সারাজীবনের আইডি কার্ডের মতো!



যাই হোক, যদি দেখার সৌন্দর্যের কথা বলি, তাহলে কালিজিরার স্থান সবার পিছনেই হবে মনে হয়। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে এর অবস্থান অনেক উপরে। কালিজিরা জ্বর, কফ, গায়ের ব্যথা দূর করে; পেটের যাবতীয় রোগ-জীবাণু ও গ্যাস দূর করে ক্ষুধা বাড়ায়; শরীরে পানি জমে হাত-পা ফুলে যাওয়া প্রতিরোধ করে; শিশুর জন্যে মায়ের বুকের দুধের পরিমাণ বাড়ায়; সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করে; ইত্যাদি ইত্যাদি। বলে শেষ করা মুসকিল। পাঁচ হাজার বছরের পুরোনো মিসরীয় সভ্যতার সময়কার রাজা তুত-আনখ-আমেনের মমির ঘরেও নাকি কালিজিরা পাওয়া যায়, যা নাকি রাজার পরবর্তী জীবনে সাহাজ্য করার কথা! আমরা অবশ্য পরবর্তী জীবনের কথা জানি না; এই জীবনেই যে কালিজিরা আমাদের ভালো কিছু দিতে পারে, সেটা বলতে পারি। সে যতোই কালো হোক......



আমরা কিছুদিন যাবত ভর্তা নিয়ে লিখছিলাম। বাঙ্গালীর যেন ভর্তা না হলে চলেই না। তবে কালিজিরার ভর্তাটা একটু অন্যরকম। কারণ এটা শুধুমাত্র একটা খাবারই নয় কিন্তু; এটা একটা মহৌষধ। এটা পেট পুরে খাবার জিনিস নয়; বেশী খেলে শরীরের ক্ষতিও হতে পারে। তবে নিয়মিতভাবে অল্প করে খাবারের মেনুতে রাখাটা ভালো। আমাদেরকে সুস্থ্য রাখতে কালিজিরা একটা বড় ভুমিকা রাখবে।




কালিজিরা ভর্তার রেসিপি আসলে তেমন কিছু বলার নেই। প্রথমে কালিজিরা ধুয়ে ছাকনিতে রেখে পানি ঝরিয়ে নিয়েছি। তারপরে রসুন, কাঁচামরিচ আর সামান্য লবণ যোগে বেঁটে নিলেই হলো। আমরা পাটা ব্যবহার করেছি; আপনি ফুড প্রসেসর ব্যবহার করতে পারেন। আমরা এখানে মাত্র দুই টেবিল চামচ কালিজিরা ব্যবহার করেছি। কোন পানিও কিন্তু দেবার প্রয়োজন পড়েনি। এত্ত সহজ রেসিপি খুব কমই পাওয়া যায়। তবে আসল ব্যাপারটা কিন্তু রেসিপিতে নয়; স্বাদে। কালিজিরার স্বাদ কিন্তু কালিজিরার মতোই। এখানে খুব বেশী কিছু আশা করলে ভুল হবে। আমরা খাবারে খুব কম পরিমাণে কালিজিরা ব্যবহার করি, তাই সেখানে কালিজিরার ফ্লেভারটা খাবারের অন্যান্য উপাদানকে উড়িয়ে দিতে পারে না। তবে শুধু কালিজিরা কিন্তু অন্য ব্যাপার। তবে অন্য খাবার, প্রধাণত ভাতের সাথে খেতে খারাপ লাগবে না। রসুন আর মরিচ স্বাদটাকে কিছুটা ব্যালান্স করবে। আমাদের ছোট্ট লামিসাও পছন্দ করেই খেয়েছে, যদিও আমরা সন্দেহ করেছিলাম সে এটা পছন্দ করবে কিনা। বরং দিদাকে খেতে দেখে তার উতসাহ দিগুণ হয়ে গিয়েছিল!



অনেকে কালিজিরার সাথে পিঁয়াজ, সরিষার তেল বা অন্য কিছুও দেন। আমরা অবশ্য দিই নি। পিঁয়াজ ব্যবহার করলে সাথে সাথেই খেয়ে ফেলার একটা ঝামেলা থাকে। আর কালিজিরা একসাথে খুব বেশী তো খাওয়াও যায় না, যেটা আগেই উল্লেখ করেছি। ফ্রিজে রেখে খেতে পারলে ব্যাপারটা অনেক সহজ হয়ে যায়। আমরা দু'-তিন দিন ধরে ফ্রিজে রেখে এটা খেতে পেরেছি; সমস্যায় পড়িনি। এটা আমার মা'র (নিলুফা কামাল) কাছ থেকেই শেখা। তাই এটাকে মাদার'স রেসিপিও বলতে পারেন, যদিও এই রেসিপি মোটামুটি সর্বজনবিদিত।

খুব শিগগিরই নতুন কিছু নিয়ে লেখার প্রত্যাশা রেখে আজকে শেষ করছি। মতামত দেবেন কিছু অবশ্যই। আপনি মতামত না দিলে দেবে কে, বলুন?

আমাদের ভর্তা নিয়ে লেখা অন্য পোস্টগুলিও পড়তে পারেনঃ
ঝিঙ্গা ভর্তা
বেগুন ভর্তা, টমেটো ভর্তা, লাউশাক ভর্তা, ছিম ভর্তা, ডাটাশাক ভর্তা

No comments:

Post a Comment