Wednesday, 7 August 2013

ঈদের প্রস্তুতির শুরু...... (চালকুমড়ার মোরব্বা)

০৭ অগাস্ট ২০১৩



রোযা শেষ হয়নি; তবে এখনি ঈদের প্রস্তুতি না নিতে পারলে ঈদের দিনে আপ্যায়ণের জন্য কিছুই হাতের কাছে থাকবে না। কাজেই বসে না থেকে আমাদের ঈদের রান্না শুরু হয়ে গেছে। প্রথমে এমন কিছু রান্না দিয়ে এই প্রস্তুতিপর্বের শুরু যেটা মোটামুটি আগে তৈরি করলেও সমস্যা নেই; ফ্রিজে রেখে দেওয়া যাবে। ঠিক এমনি একটি খাবার হলো চালকুমড়ার মোরব্বা (Candied Ash Gourd)। চালকুমড়া (Ash Gourd/Winter Melon) স্বাদের দিক থেকে বেশ সাধারন একটি সবজি। আর এই সাধারন স্বাদের কারনেই খুব সহজেই সে অন্য কোন স্বাদ গ্রহণ করতে পারে; যেমন মিষ্টি স্বাদ। আর সে কারণেই বহুকাল যাবত চালকুমড়ার মোরব্বা বেশ জনপ্রিয় একটা সুমিষ্ট খাবার। মা (শরীফুন নাহার) এবার ঠিক করে ফেললেন মোরব্বা বানাবেন। তবে রেসিপিটা একটু নিজের মত করে; প্রচলিত নিয়মে নয়।



আমাদের বাড়িতে মিষ্টির কদর কিছুটা কম। তবে ঈদের দিনে কোন ধরণের মিষ্টি না থাকলে কেমন যেন লাগে। তবে যেহেতু সবাই মিষ্টির কাছে দিয়ে ঘেষাঘেষি করবে না, তাই এমন কিছু খাবারের অপশন রাখতে হবে যেখানে মিষ্টি থাকবে, তবে খেতে খুব বেশি মিষ্টি লাগবে না। এই চিন্তা থেকেই এই মোরব্বার তৈরি শুরু হলো। এটা এমন একটা আইটেম যেটা অনেক খাবারের মধ্যে উপকরণ হিসেবে চলে। যেখানেই মিষ্টি দরকার (বিশেষ করে ডেসার্ট), সেখানেই মোরব্বা দিয়ে দিলেই হল। আর সেটা চিনি যোগ করার চাইতে অনেক বেশি উপাদেয় হয়। আর শুধু ঈদ নয়, যেকোন সময়েই মোরব্বা ডাইনিং টেবিলের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে।



 চলুন, দেরী না করে মা'র সাথে রান্নাঘর থেকে ঘুরে আসি। আগেই বলে নিচ্ছি যে এই রেসিপিটা মা'র; অনেকের রেসিপি থেকে এটা আলাদা হতেই পারে। তবে প্রধান উপকরন একই - চুনপড়া চালকুমড়া। চুনপড়া চালকুমড়া বেশ কিছুটা শক্ত হয় বলেই মোরব্বা এটা দিয়ে বানানো যায়। নরম চালকুমড়া দিয়ে বানানো কঠিন হবে, কারণ তখন চালকুমড়া একেবারে গলে যেতে পারে। প্রথমে চালকুমড়াটাকে বড় বড় টুকরা করে কেটে নিয়ে খোসা ছাড়িয়ে নেয়া হয়ছে। তারপরে বিচিগুলিকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।




এরপর চালকুমড়ার টুকরাগুলিকে কাঁটাচামচ দিয়ে খুব ভালোমতো কেঁচে নেয়া হয়েছে। এই কেঁচে নেওয়ার ফলে চালকুমড়ার ভেতরে চিনির শিরা ঢুকতে পারবে ঠিকমতো।









এবারে চিনির শিরা বানাবার পালা। মা একটা বড় প্যানে কিছু পানি নিয়ে তাতে চিনি দিলেন এক থেকে দেড় কাপ। অবশ্য চিনির পরিমাণ নির্ভর করবে আপনার স্বাদের উপরে। তবে যেহেতু পরবর্তীতে কন্ডেন্সড মিল্ক দেয়া হবে, তাই চিনি কিছুটা কম হলেই ভালো। চিনি দিয়ে মধ্যম আঁচে নাড়তে হবে যতক্ষন পর্যন্ত চিনি মিলিয়ে না যায়। এরপরে ৮-৯টা এলাচ নিয়ে হামান দিস্তায় একটু থেঁতলে নিলেন মা। থ্যাঁতলানোর ফলে এর ফ্লেভারটা ভালো করে বের হবে। এরপর কয়েকটা ফ্রেস এলাচ পাতা (Cardamom Leaves) নিয়ে কিছুটা চিরে নিয়েছেন। চিরে নেয়ার সাথে সাথেই ফ্লেভারে ভরে যাবে রান্নাঘর। আমাদের ছোট্ট বাগানে এলাচ গাছ ছিলো বলে আমরা এটা পেরেছি। আপনি শুকনো তেজপাতা (Dried Indian Bayleaf) ব্যবহার করতে পারেন। এই থেঁতলে নেয়া এলাচ, চিরে নেয়া এলাচ পাতা আর কিছু দারুচিনি নিয়ে প্যানে দিয়ে দিলেন মা।






এরপর চিনির শিরার উপরে আস্তে আস্তে চালকুমড়ার টুকরাগুলিকে বিছিয়ে দিলেন মা। চালকুমড়াগুলি বেশ ঘন ঘন করে বিছিয়ে নিয়েছেন মা, কারন কিছুক্ষন পরে চালকুমড়াগুলি বেশ খানিকটা চুপসে যাবে, আর প্যানে বেশ খানিকটা জায়গার সঙ্কুলান হবে। বিছানোর সময় চালকুমড়াগুলি চিনির শিরার মাঝে পুরোপুরি না ডুবলেও চলবে। কারন জাল দেয়ার কারনে চালকুমড়াগুলি অনেক পানি ছাড়বে; তখন সবগুলি টুকরাই অনেকটা ডুবে যাবে শিরায়। তবে পুরোপুরি না ডুবলেও সমস্যা নেই, কারন টুকরাগুলিকে কিছুক্ষন পর সাবধানে উলটে দিতে হবে। এভাবে চালকুমড়াগুলির রঙ পরিবর্তন হতে থাকবে। চালকুমড়াগুলির ভেতর ছুরি ঢুকিয়ে দেখতে হবে যে সিদ্ধ হয়েছে কিনা। সিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত জাল দিয়ে যেতে হবে।



সিদ্ধ হয়ে যাবার পরে মা এর মধ্যে এক কৌটা কন্ডেন্সড মিল্ক (Sweetened Condensed Milk) ঢেলে দিলেন। ঢেলে খুব ভালোমতো মিক্স করে নিতে হবে। ব্যাস, হয়ে গেল চালকুমড়ার মোরব্বা (Candied Ash Gourd)। এখন এটাকে এয়ারটাইট কন্টেইনারে ভরে ফ্রিজে রেখে অনেকদিন ধরে খাওয়া যাবে।



আজকে এ পর্যন্তই। সামনের দিনগুলিতে মোরব্বা ব্যবহার করে কিছু রেসিপি দেবার আশা রইলো। আপনাদের মতামত দিতে ভুলে যাবেন না যেন। আপনাদের মতামতেরই উপরেই আমরা ভরসা পাই সামনে এগুনোর।

No comments:

Post a Comment